যোহনলিখিত সুসমাচার 7

7
যীশু ও তাঁর ভাইরা
1এরপর যীশু গালীলের চারদিকে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি যিহূদিয়ায় ভ্রমণ করতে চাইলেন না, কারণ ইহুদীরা তাঁকে খুন করবার সুযোগ খুঁজছিল। 2এই সময় ইহুদীদের কুটিরবাস পর্ব#7:2 কুটিরবাস পর্ব এই পর্ব প্রতি বছর সারা সপ্তাহব্যাপী পালন করা হত। পর্বের সময় ইহুদীরা তাঁবুতে বাস করত এবং মোশির সময়ে 40 বছর ধরে মরুভূমিতে ঘোরাফেরার কথা স্মরণ করত। এগিয়ে আসছিল। 3তখন তাঁর ভাইরা তাঁকে বলল, “তুমি এই জায়গা ছেড়ে যিহূদিয়াতে ঐ উৎসবে যাও যাতে তুমি যে সব অলৌকিক কাজ করছ তা তোমার শিষ্যরাও দেখতে পায়। 4কারণ কেউ যদি প্রকাশ্যে নিজেকে তুলে ধরতে চায় তবে সে নিশ্চয়ই তার কাজ গোপন করবে না। তুমি যখন এত সব মহত্ কাজ করছ তখন নিজেকে জগতের কাছে প্রকাশ কর। যেন সবাই তা দেখতে পায়।” 5তাঁর ভাইরাও তাঁকে বিশ্বাস করত না।
6যীশু তাঁর ভাইদের বললেন, “আমার নিরূপিত সময় এখনও আসে নি; কিন্তু তোমাদের যাওয়ার জন্য যে কোন সময় সঠিক, এখনই তোমরা যেতে পার। 7জগত সংসার তোমাদের ঘৃণা করতে পারে না, কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে। কারণ পৃথিবীর লোকেরা, যারা মন্দ কাজ করে, সেই সব লোকদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিই। 8তোমরা পর্বে যাও, আমি এখন এই উৎসবে যাচ্ছি না, কারণ আমার নিরূপিত সময় এখনও আসে নি।” 9এই কথা বলার পর তিনি গালীলেই রয়ে গেলেন।
10তাঁর ভাইরা উৎসবে চলে গেল। পরে তিনিও সেখানে গেলেন, কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে সেই পর্বে না গিয়ে গোপনে সেখানে গেলেন। 11ইহুদী নেতারা উৎসবে এসে তাঁর খোঁজ করতে লাগল। তারা বলাবলি করতে লাগল, “সেই লোকটা গেল কোথায়?”
12আর জনতার মধ্যে তাঁকে নিয়ে নানা রকম গুজব ছড়াতে লাগল। কেউ কেউ বলল, “আরে তিনি খুব ভালো লোক।” কিন্তু আবার অন্যরা বলল, “না, না, ও লোকদের ঠকাচ্ছে।” 13কিন্তু ইহুদী নেতাদের ভয়ে তাঁর বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে চাইল না।
জেরুশালেমে যীশুর শিক্ষা
14পর্বের আধা-আধি সময়ে যীশু মন্দিরে গিয়ে লোকদের মাঝে শিক্ষা দিতে লাগলেন। 15ইহুদীরা এতে খুব আশ্চর্য হয়ে বলল, “এই লোক কোন কিছু অধ্যয়ন না করেই কিভাবে এত সব জ্ঞান লাভ করল?”
16এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি যা শিক্ষা দিই তা আমার নিজস্ব নয়। যিনি আমায় পাঠিয়েছেন এসব সেই ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া। 17যদি কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চায় তাহলে সে জানবে আমি যা শিক্ষা দিই তা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, না আমি নিজের থেকে এসব কথা বলছি। 18যদি কেউ নিজের ভাবনার কথা নিজে বলে, তাহলে সে নিজেই নিজেকে সম্মানিত করতে চায়; কিন্তু যে তার প্রেরণ কর্তার গৌরব চায়, সেই লোক সত্যবাদী, তার মধ্যে কোন অসাধুতা নেই। 19মোশি কি তোমাদের কাছে বিধি-ব্যবস্থা দেন নি? কিন্তু তোমরা কেউই সেই বিধি-ব্যবস্থা পালন কর না। তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে চাইছ?”
20জনতা উত্তর দিল, “তোমাকে ভূতে পেয়েছে, কে তোমাকে হত্যা করতে চাইছে?”
21এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি একটা অলৌকিক কাজ করেছি, আর তোমরা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেছ। 22মোশিও তোমাদের সুন্নতের বিধি-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। যদিও মুলতঃ সেই বিধি-ব্যবস্থা মোশির নয় কিন্তু এই বিধি-ব্যবস্থা প্রাচীন পিতৃপুরুষদের কাছ থেকে এসেছে। আর তোমরা বিশ্রামবারেও শিশুদের সুন্নত করে থাকো। 23মোশির বিধি-ব্যবস্থা যেন লঙ্ঘন করা না হয়, এই যুক্তিতে বিশ্রামবারেও যদি কোন মানুষের সুন্নত করা চলে, তাহলে আমি বিশ্রামবারে একটা মানুষকে সম্পূর্ণ সুস্থ করেছি বলে তোমরা আমার ওপর এত ক্রুদ্ধ হয়েছ কেন? 24বাহ্যিকভাবে কোন কিছু দেখেই তার বিচার করো না। যা সঠিক সেই হিসাবেই ন্যায় বিচার কর।”
লোকেরা সংশয়গ্রস্ত যীশুই কি খ্রীষ্ট?
25তখন জেরুশালেমের লোকেদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “এই লোককেই না ইহুদী নেতারা হত্যা করতে চাইছে? 26কিন্তু দেখ! এ তো প্রকাশ্যেই শিক্ষা দিচ্ছে; কিন্তু তারা তো এঁকে কিছুই বলছে না। এটা কি হতে পারে যে নেতারা সত্যিই জানে যে, ইনি সেই খ্রীষ্ট? 27আমরা জানি ইনি কোথা থেকে এসেছেন; কিন্তু মশীহ যখন আসবেন তখন কেউ জানবে না তিনি কোথা থেকে এসেছেন।”
28তখন যীশু মন্দিরে শিক্ষা দিতে দিতে বেশ চেঁচিয়ে বললেন, “তোমরা আমায় জান, আর আমি কোথা থেকে এসেছি তাও তোমরা জান। তবু বলছি, আমি নিজের থেকে আসি নি, তবে যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তিনি সত্য; আর তোমরা তাঁকে জান না। 29কিন্তু আমি তাঁকে জানি, কারণ তিনি আমায় পাঠিয়েছেন। আমি তাঁরই কাছ থেকে এসেছি।”
30তখন তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা করতে লাগল। তবু কেউ তাঁর গায়ে হাত দিতে সাহস করল না, কারণ তখনও তার সময় আসে নি। 31কিন্তু সেই জনতার মধ্যে থেকে অনেকেই তাঁর ওপর বিশ্বাস করল; আর বলল, “মশীহ এসে কি তাঁর চেয়েও বেশী অলৌকিক চিহ্ন করবেন?”
ইহুদীরা যীশুকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করল
32ফরীশীরা শুনল যে সাধারণ লোক যীশুর বিষয়ে চুপি চুপি এইসব আলোচনা করছে। তখন প্রধান যাজকরা ও ফরীশীরা যীশুকে ধরে আনবার জন্য মন্দিরের কয়েকজন পদাতিককে পাঠাল। 33তখন যীশু বললেন, “আমি আর অল্প কিছুকাল তোমাদের সঙ্গে আছি; তারপর যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তাঁর কাছে ফিরে যাব। 34তোমরা আমার খোঁজ করবে, কিন্তু আমার খোঁজ পাবে না, কারণ আমি যেখানে থাকব তোমরা সেখানে আসতে পারো না।”
35ইহুদী নেতারা তখন পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “সে এমন কোথায় যাবে যে আমরা ওকে খুঁজলেও পাব না? গ্রীকদের শহরে যে সব ইহুদীরা বসবাস করছে, ও কি তাদের কাছে যাবে আর সেখানে গিয়ে গ্রীকদেব কাছে শিক্ষা দেবে? নিশ্চয়ই নয়। 36ও যে কথা বলল তার মানে কি যে, ‘তোমরা আমার খোঁজ করবে কিন্তু আমায় পাবে না?’ আর ‘আমি যেখানে যাব, তোমরা সেখানে আসতে পার না?’”
যীশু পবিত্র আত্মার বিষয়ে বললেন
37পর্বের শেষ দিন, যে দিনটি বিশেষ দিন, সেই দিন যীশু উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললেন, “কারোর যদি পিপাসা পেয়ে থাকে তবে সে আমার কাছে এসে পান করুক। 38শাস্ত্রে এ কথা বলে, যে আমার ওপর বিশ্বাস করে তার অন্তর থেকে জীবন্ত জলের নদী বইবে।” 39যীশু পবিত্র আত্মা সম্পর্কে এই কথা বললেন, “সেই পবিত্র আত্মা তখনও দেওয়া হয় নি, কারণ যীশু তখনও মহিমান্বিত হন নি; কিন্তু পরে যারা যীশুকে বিশ্বাস করে তারা সেই আত্মা পাবে।”
যীশুকে নিয়ে লোকদের মধ্যে তর্ক
40সমবেত জনতা যখন এই কথা শুনল তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “ইনি সত্যিই সেই ভাববাদী।”
41অন্যরা বলল, “ইনি মশীহ (খ্রীষ্ট)।”
এ সত্ত্বেও কেউ কেউ বলল, “খ্রীষ্ট গালীলী থেকে আসবেন না। 42শাস্ত্রে কি একথা লেখা নেই যে খ্রীষ্টকে দায়ূদের বংশধর হতে হবে; আর দায়ূদ যে বৈৎলেহম শহরে থাকতেন, তিনি সেখান থেকে আসবেন?” 43তাঁর জন্য এইভাবে লোকদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হল। 44কেউ কেউ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চাইল; কিন্তু কেউ তাঁর গায়ে হাত দিতে সাহস করল না।
ইহুদী নেতাদের অবিশ্বাস
45তখন মন্দিরের সেই পদাতিকরা, প্রধান যাজক ও ফরীশীদের কাছে ফিরে গেল। তাঁরা মন্দিরের সেই পদাতিককে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা তাঁকে ধরে আনলে না কেন?”
46পদাতিকরা বলল, “উনি যে সব কথা বলছিলেন কোন মানুষ কখনও সেই ধরণের কথা বলেনি!”
47তখন ফরীশীরা বললেন, “তাহলে তোমরাও কি ঠকে গেলে? 48ফরীশী বা নেতাদের মধ্যে এমন কেউ কি ছিলেন যিনি তাঁর ওপর বিশ্বাস করেছেন? 49কিন্তু এইসব লোকেরা বিধি-ব্যবস্থার কিছুই জানে না। তারা অভিশপ্ত এবং ঈশ্বরের কৃপা থেকে বঞ্চিত।”
50তখন এই নেতাদের একজন নীকদীম, যিনি ফরীশীদের মধ্যে একজন, তাঁদের বললেন, তিনিই আগে একবার যীশুর কাছে গিয়েছিলেন। 51কোন ব্যক্তির কথা না শুনে আমরা আমাদের বিধি-ব্যবস্থায় তার বিচার করতে পারি না। সে কি করেছে তা না জেনে আমরা তার বিচার করতে পারি না।
52এর উত্তরে তারা তাকে বলল, “তুমি নিশ্চয়ই গালীলী থেকে আসো নি, তাই না? শাস্ত্র পড়ে দেখো তাহলে জানবে যে গালীলী থেকে কোন ভাববাদীর আবির্ভাব হয় নি।”
ব্যভিচারিণীর বিচার
53এরপর ইহুদী নেতারা সেখান থেকে যে যার বাড়ি চলে গেলেন।

Podkreślenie

Udostępnij

Kopiuj

None

Chcesz, aby twoje zakreślenia były zapisywane na wszystkich twoich urządzeniach? Zarejestruj się lub zaloguj