YouVersioni logo
Search Icon

লূকলিখিত সুসমাচার 2

2
যীশুর জন্ম
(মথি 1:18-25)
1সেই সময় আগস্ত কৈসর হুকুম জারি করলেন যে, রোম সাম্রাজ্যের সব জায়গায় লোক গণনা করা হবে। 2এটাই হল সুরিয়ার রাজ্যপাল কুরীণিয়ের সময়ে প্রথম আদমশুমারি। 3আর প্রত্যেকে নিজের নিজের শহরে নাম লেখাবার জন্য গেল।
4যোষেফ ছিলেন রাজা দায়ূদের বংশধর, তাই তিনি গালীল প্রদেশের নাসরৎ থেকে রাজা দায়ূদের বাসভূমি বৈৎলেহমে গেলেন। 5যোষেফ তাঁর বাগ্দত্তা স্ত্রী মরিয়মকে সঙ্গে নিয়ে নাম লেখাতে চললেন। এই সময় মরিয়ম ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। 6তাঁরা যখন সেখানে ছিলেন, তখন মরিয়মের প্রসব বেদনা উঠল। 7আর মরিয়ম তাঁর প্রথম সন্তান প্রসব করলেন। তিনি সদ্যোজাত সেই শিশুকে কাপড়ের টুকরো দিয়ে জড়িয়ে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখলেন, কারণ ঐ নগরের অতিথিশালায় তাঁদের জন্য জায়গা ছিল না।
মেষপালকরা যীশুর সম্পর্কে শুনলেন
8সেখানে গ্রামের বাইরে মেষপালকরা রাতে মাঠে তাদের মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল। 9এমন সময় প্রভুর এক স্বর্গদূত তাদের সামনে উপস্থিত হলে প্রভুর মহিমা চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল। এই দেখে মেষপালকরা খুব ভয় পেয়ে গেল। 10সেই স্বর্গদূত তাদের বললেন, “ভয় নেই, দেখ আমি তোমাদের কাছে এক আনন্দের সংবাদ নিয়ে এসেছি। এই সংবাদ সকলের জন্য মহা আনন্দের হবে। 11কারণ রাজা দায়ূদের নগরে আজ তোমাদের জন্য একজন ত্রাণকর্তার জন্ম হয়েছে। তিনি খ্রীষ্ট প্রভু। 12আর তোমাদের জন্য এই চিহ্ন রইল, তোমরা দেখবে একটি শিশুকে কাপড়ে জড়িয়ে একটা জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখা হয়েছে।”
13সেই সময় হঠাৎ‌ স্বর্গীয় বাহিনীর এক বিরাট দল ঐ স্বর্গদূতদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে বললেন,
14“স্বর্গে ঈশ্বরের মহিমা,
পৃথিবীতে তাঁর প্রীতির পাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”
15স্বর্গদূতরা তাদের কাছ থেকে স্বর্গে ফিরে গেলে মেষপালকরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “চল, আমরা বৈৎলেহমে যাই, প্রভু আমাদের যে ঘটনার কথা জানালেন সেখানে গিয়ে তা দেখি।”
16তারা সেখানে ছুটে গেলে মরিয়ম, যোষেফ এবং সেই শিশুটিকে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শোওয়া অবস্থায় দেখল। 17মেষপালকেরা শিশুটিকে দেখতে পেয়ে, সেই শিশুটির বিষয়ে তাদের যা বলা হয়েছিল সেকথা সকলকে জানাল। 18মেষপালকদের মুখে ঐ কথা যারা শুনল তারা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেল। 19কিন্তু মরিয়ম এই কথা মনের মধ্যে গেঁথে নিয়ে সব সময় এবিষয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। 20এরপর মেষপালকরা তাদের কাছে যা বলা হয়েছিল সেই অনুসারে সব কিছু দেখে ও শুনে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে ঘরে ফিরে গেল।
21এর আট দিন পরে সুন্নত করার সময়ে শিশুটির নাম রাখা হল যীশু। মাতৃগর্ভে আসার আগেই স্বর্গদূত তাঁর এই নাম রেখেছিলেন।
যীশুকে মন্দিরে আনা হল
22মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে শুচিকরণ অনুষ্ঠানের সময় হলে তাঁরা যীশুকে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন, যেন সেখানে প্রভুর সামনে তাঁকে উৎসর্গ করতে পারেন। 23কারণ প্রভুর বিধি-ব্যবস্থায় লেখা আছে, “স্ত্রীলোকের প্রথম সন্তানটি যদি পুত্র হয়, তবে তাকে ‘প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে হবে,’”#2:23 স্ত্রীলোকের … হবে দ্রষ্টব্য যাত্রা 13:2, 12 24আর প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে, “এক জোড়া ঘুঘু অথবা দুটি পায়রার বাচ্চা উৎসর্গ করতে হবে।”#লেবীয় 12:8 সুতরাং যোষেফ এবং মরিয়ম সেইমত কাজ করবার জন্য জেরুশালেমে গেলেন।
শিমিয়োন যীশুকে দেখলেন
25জেরুশালেমে সেই সময় শিমিয়োন নামে একজন ধার্মিক ও ঈশ্বরভক্ত লোক বাস করতেন। তিনি ইস্রায়েলের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। পবিত্র আত্মা তাঁর ওপর অধিষ্ঠান করছিলেন। 26পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর কাছে একথা প্রকাশ করা হয়েছিল যে প্রভু খ্রীষ্টকে না দেখা পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হবে না। 27পবিত্র আত্মার প্রেরণায় তিনি সেদিন মন্দিরে এসেছিলেন। যীশুর বাবা-মা মোশির বিধি-ব্যবস্থা পালন করতে যীশুকে নিয়ে সেখানে এলেন। 28তখন শিমিয়োন যীশুকে কোলে তুলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন,
29“হে প্রভু, তোমার প্রতিশ্রুতি অনুসারে তুমি তোমার দাসকে শান্তিতে বিদায় দাও।
30কারণ আমি নিজের চোখে তোমার পরিত্রাণ দেখেছি।
31যে পরিত্রাণ তুমি সকল লোকের সাক্ষাতে প্রস্তুত করেছ।
32তিনি অইহুদীদের অন্তর আলোকিত করার জন্য আলো;
আর তিনিই তোমার প্রজা ইস্রায়েলের জন্য সম্মান আনবেন।”
33তাঁর বিষয়ে যা বলা হল তা শুনে যোষেফ ও মরিয়ম আশ্চর্য হয়ে গেলেন। 34এরপর শিমিয়োন তাঁদের আশীর্বাদ করে যীশুর মা মরিয়মকে বললেন, “ইনি হবেন ইস্রায়েলের মধ্যে বহু লোকের পতন ও উত্থানের কারণ। ঈশ্বর হতে আগত এমন চিহ্ন যা বহু লোকই অগ্রাহ্য করবে। 35এতে বহু লোকের হৃদয়ের গোপন চিন্তা প্রকাশ হয়ে পড়বে। যা যা ঘটবে তাতে তোমার হৃদয় বিদীর্ণ হবে।”
হান্না যীশুকে দেখলেন
36সেখানে হান্না নামে একজন ভাববাদিনী ছিলেন। তিনি আশের গোষ্ঠীর পনুয়েলের কন্যা। তাঁর অনেক বয়স হয়েছিল। বিবাহের পর সাত বছর তিনি স্বামীর ঘর করেন, 37তারপর চুরাশি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বৈধব্য জীবনযাপন করেছিলেন। মন্দির ছেড়ে তিনি কোথাও যেতেন না; উপবাস ও প্রার্থনাসহ সেখানে দিন-রাত ঈশ্বরের উপাসনা করতেন।
38ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি তাঁদের দিকে এগিয়ে এসে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে আরম্ভ করলেন; আর যারা জেরুশালেমের মুক্তির অপেক্ষায় ছিল তাদের সকলের কাছে সেই শিশুটির বিষয় বলতে লাগলেন।
যোষেফ ও মরিয়মের গৃহে প্রত্যাবর্তন
39প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে যা যা করণীয় তা সম্পূর্ণ করে যোষেফ ও মরিয়ম তাঁদের নিজেদের নগর নাসরতে ফিরে গেলেন। 40শিশুটি ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠতে লাগলেন ও বলিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। তিনি জ্ঞানে পূর্ণ হতে থাকলেন, তাঁর ওপরে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছিল।
বালক যীশু
41নিস্তারপর্ব#2:41 নিস্তারপর্ব ইহুদীদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র দিন। এই দিন তাঁরা বিশেষভাবে প্রস্তুত খাবার খেতেন এবং তার মাধ্যমে ঈশ্বর মোশির সময়ে যেভাবে তাদের মিশরের বন্দীদশা থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন তা স্মরণ করতেন। পালনের জন্য তাঁর মা-বাবা প্রতি বছর জেরুশালেমে যেতেন। 42যীশুর বয়স যখন বারো বছর, তখন তাঁরা যথারীতি সেই পর্বে যোগ দিতে গেলেন। 43পর্বের শেষে তাঁরা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বালক যীশু জেরুশালেমেই রয়ে গেলেন, এবিষয়ে তাঁর মা-বাবা কিছুই জানতে পারলেন না। 44তাঁরা মনে করলেন যে তিনি দলের সঙ্গেই আছেন। তাঁরা এক দিনের পথ চলার পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে তাঁর খোঁজ করতে লাগলেন। 45কিন্তু তাঁকে না পেয়ে তাঁরা যীশুর খোঁজ করতে করতে আবার জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।
46শেষ পর্যন্ত তিন দিন পরে মন্দির চত্বরে তাঁর দেখা পেলেন। সেখানে তিনি ধর্ম শিক্ষকদের সাথে বসে তাঁদের কথা শুনছিলেন ও তাঁদের নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন। 47যাঁরা তাঁর কথা শুনছিলেন তাঁরা সকলে যীশুর বুদ্ধি আর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া দেখে অবাক হয়ে গেলেন। 48যীশুর মা-বাবা তাঁকে সেখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তাঁর মা তাঁকে বললেন, “বাছা, তুমি আমাদের সঙ্গে কেন এমন করলে? তোমার বাবা ও আমি ভীষণ ব্যাকুল হয়ে তোমার খোঁজ করে বেড়াচ্ছি।”
49যীশু তখন তাঁদের বললেন, “তোমরা কেন আমার খোঁজ করছিলে? তোমরা কি জানতে না যে যেখানে আমার পিতার কাজ, সেখানেই আমাকে থাকতে হবে?” 50কিন্তু তিনি তাঁদের যা বললেন তার অর্থ তাঁরা বুঝতে পারলেন না।
51এরপর তিনি তাঁদের সঙ্গে নাসরতে ফিরে গেলেন, আর তাঁদের বাধ্য হয়ে রইলেন। তাঁর মা এসব কথা মনের মাঝে গেঁথে রাখলেন। 52এইভাবে যীশু বয়সে ও জ্ঞানে বড় হয়ে উঠলেন, আর ঈশ্বর ও মানুষের ভালবাসা লাভ করলেন।

Tõsta esile

Share

Kopeeri

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in