যিশাইয় 5

5
দ্রাক্ষাকুঞ্জের গান
1আমার প্রিয়তমের উদ্দেশে একটি প্রেমসঙ্গীত গাইতে দাও, এ গান তাঁরই দ্রাক্ষাকুঞ্জের গান! একটি দ্রাক্ষাকুঞ্জ ছিল আমার প্রিয়তমের, ছিল সে কুঞ্জ অতি উর্বর এক গিরির উপরে।
2সেই ভূমি খনন করে তুলে ফেললেন তিনি সমস্ত পাথর, রোপণ করলেন উৎকৃষ্ট দ্রাক্ষালতা। নির্মাণ করলেন সেখানে উচ্চ এক প্রহরা গৃহ, তৈরী করলেন দ্রাক্ষাদলনের কুণ্ডও। উৎকৃষ্ট দ্রাক্ষাফলের আশায় ছিলেন তিনি, গাছে ফল ধরল, কিন্তু সে ফল হল টক।#মথি 21:33; মার্ক 12:1; লুক 20:9
3আমার প্রিয়তম বললেন, হে জেরুশালেম ও যিহুদীয়া নিবাসী এখন তোমরাই বল, এই দ্রাক্ষাকুঞ্জ রচনায় আমি কি না করেছি। 4আমি কি এর জন্য কোন কিছু করতে বাকী রেখেছি? তাহলে যে ভাল আঙুর আমি প্রত্যাশা করেছিলাম, তার পরিবর্তে টক, বুনো আঙুর কেন ফলল?
5এবার দেখ, এই দ্রাক্ষাকুঞ্জের কি অবস্থা আমি করতে চলেছি। এর চারিদিকের বেড়া আমি তুলে দেব, ভেঙ্গে ফেলব এর প্রাচীর। বন্য জন্তুরা এসে সব খেয়ে নেবে, পায়ে দলে সব নষ্ট করে দেবে। 6আগাছায় ভরে যাবে সব। দ্রাক্ষালতা ছেঁটে পরিষ্কার করতে বা তার গোড়া খুঁড়তে কাউকে দেব না। তার বদলে, সেখানে শ্যাকুল ও কাঁটাঝোপে ছেয়ে যাবে। মেঘমালাকে আমি দ্রাক্ষাকুঞ্জের উপরে বারি বর্ষণ করতে নিষেধ করব।
7ইসরায়েলই সর্বাধিপতি প্রভু পরমেশ্বরের দ্রাক্ষাকুঞ্জ,
যিহুদীয়ার মানুষ তাঁরই রোপিত দ্রাক্ষালতা,
তাদের কাছে তিনি আশা করেছিলেন ধর্মনিষ্ঠা,
কিন্তু পরিবর্তে সে হল রক্তপিপাসু,
তিনি তাদের কাছে আশা করেছিলেন ন্যায়সঙ্গত কাজ,
কিন্তু ঐ শোন নিপীড়িতের ক্রন্দন ধ্বনি।
মানুষের দুষ্কর্ম
8তোমাদের সর্বনাশ অনিবার্য! তোমাদের বাড়ি, চাষের ক্ষেত থাকা সত্ত্বেও বাড়ির পর বাড়ি, ক্ষেতের পর ক্ষেত কিনেই চলেছ। কিন্তু অচিরেই এখানে বাস করার জন্য অন্য কারো স্থান থাকবে না। একমাত্র তোমারাই সারা দেশে একাকী বাস করবে। 9সর্বাধিপতি প্রভু পরমেশ্বরকে আমি বলতে শুনেছি, এইসব বিশাল কারুকার্যময় অট্টালিকা জনমানবহীন, শূন্য, পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকবে। 10দশ একর ক্ষেত দ্রাক্ষালতায় ছেয়ে যাবে কিন্তু তার থেকে উৎপন্ন দ্রাক্ষার রস পাবে মাত্র এক বাথ,#5:10 হিব্রু: এক বাথ: আট লিটার এক হোমর#5:10 হিব্রু: এক হোমর: একশো আশি কিলোগ্রাম বীজ বুনে ফসল পাবে মাত্র এক ঐফা#5:10 হিব্রু: এক ঐফা: আঠেরো কিলোগ্রাম
11তোমাদের সমূহ সর্বনাশ! ভোর বেলা থেকে তোমরা শুরু কর সুরাপান, রাত্রি পর্যন্ত চলে তোমাদের উন্মত্ততা। 12তোমাদের ভোজের উৎসবে বীণা তম্বুরা ও বাঁশীর সঙ্গে থাকে সুরার আয়োজন। এসবে তোমরা এতই মত্ত যে, কিছুতেই বুঝতে পার না প্রভু পরমেশ্বর কি করতে চলেছেন। 13ফলে একদিন দেখবে বন্দীরূপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তোমাদের। ক্ষুধায় মরবে নেতৃবৃন্দ, আর তৃষ্ণায় মরবে আপামর জনসাধারণ। 14মৃত্যুলোকে ক্ষুধিত, তাদের গ্রাস করার জন্য সে মুখ বিস্তার করে আছে। জেরুশালেমের অভিজাত সুধীজন কোলাহল মুখর সাধারণ মানুষের স্রোতের সঙ্গে সেই মুখগহ্বরে নেমে যাচ্ছে।
15প্রত্যেকের মর্যাদাহানি হবে, গর্বিতের গর্ব চূর্ণ হবে। 16কিন্তু সর্বাধিপতি প্রভু পরমেশ্বরের ন্যায়সঙ্গত কর্মের মাধ্যমে তাঁর মহত্ত্ব প্রকাশিত হয়, তাঁর প্রজাদের প্রতি বিচারের নিষ্ঠায় ব্যক্ত হয় তাঁর পবিত্রতা। 17বিধ্বস্ত নগর-জনপদে মেষশাবকেরা চরে বেড়াবে, ছাগ শিশু পাবে চরাণীর স্থান।#5:17 হিব্রু অস্পষ্ট: সম্ভাব্য পাঠ: সম্পর্কহীন দূরবর্তী এক জাতি। হিব্রু: সম্পর্কহীন দূরবর্তী জাতিসমূহ।
18তোমাদের সর্বনাশ অনিবার্য! পাপের কবল থেকে তোমরা নিজেদের মুক্ত করতে পারলে না। 19তোমরা অবজ্ঞাভরে বলে থাক, প্রভু পরমেশ্বর যা করবেন বলেছেন, অবিলম্বে করুন, আমরা একবার দেখি। ইসরায়েলের আরাধ্য পবিত্র ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা কার্যকর করুন, আমরা দেখি, তাঁর মনে কি আছে!
20তোমাদের শিয়রে সর্বনাশ! তোমরা মন্দকে ভাল আর ভালকে মন্দ বলে থাক। তোমরা অন্ধকারকে আলোতে এবং আলোকে অন্ধকারে পরিণত কর। যা কিছু তিক্ত, তাকে মিষ্ট আর মিষ্টকে তোমরা তিক্ত করে তোল।
21তোমাদের সর্বনাশের দেরী নেই! তোমরা ভাব, তোমরা খুব জ্ঞানী আর বড় চালাক।
22সমূহ সর্বনাশ তোমাদের! সুরা পানেই বীরত্ব তোমাদের! সুরা মিশ্রণে সিদ্ধহস্ত তোমরা! 23কিন্তু উৎকোচের বিনিময়ে অপরাধীকে ছেড়ে দাও, আর নিরপরাধকে ন্যায়বিচারে বঞ্চিত কর। 24কাজেই, এখন, খড় এবং শুকনো ঘাস যেমন আগুনে কুঁকড়ে পড়ে যায়, ঠিক তেমনি তোমাদের মূল শুকিয়ে জীর্ণ হয়ে যাবে, তোমাদের ফোটা ফুল শুকিয়ে বাতাসে উড়ে যাবে। কারণ ইসরায়েলের আরাধ্য পবিত্র ঈশ্বর, সর্বাধিপতি প্রভু পরমেশ্বরের শিক্ষাকে তোমরা প্রত্যাখ্যান করেছ। 25প্রভু পরমেশ্বরের ক্রোধের আগুন তাঁর প্রজাদের উপরে জ্বলে উঠেছে, তিনি তাদের দণ্ডদানে উদ্যত হয়েছেন। এবার পর্বতরাজি থর থর করে কাঁপবে, মৃতদেহ আবর্জনার মত রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে থাকবে। তারপরেও তাঁর ক্রোধ প্রশমিত হবে না, দণ্ডদানে উদ্যত হয়ে থাকবে তাঁর হাত।
26বহুদূরবাসী জাতিবৃন্দকে তিনি আহ্বানের সঙ্কেত দিয়েছেন, পৃথিবীর প্রান্ত থেকে তাদের আগমনের জন্য বংশীধ্বনি করেছেন। তারা আসছে, দ্রুতগতিতে, ত্বরিতচরণে! 27তাদের কারো ক্লান্তি আসে না, হোঁচট‌্ খায় না কেউ। কারো চোখে তন্দ্রা নামে না, ঘুমিয়ে পড়ে না কেউ। শিথিল হয় না কারো কটি বন্ধনী, ছিন্ন হয় না কারো পাদুকার বন্ধন। 28তীক্ষ্মধার তাদের বাণের মুখ, বাণ নিক্ষেপের জন্য তাদের ধনুক সদা প্রস্তুত। চক্‌মকি পাথরের মত শক্ত কঠিন তাদের অশ্বের খুর, ঘূর্ণিঝড়ের মত ঘোরে তাদের রথচক্র। 29যুবা সিংহ শিকার ধরে যে ভাবে বীরদর্পে গর্জন করতে করতে গুহায় নিয়ে যায়, যাতে কেউ তার শিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেইভাবে তাদের সৈন্যবাহিনীও তেজোদৃপ্ত হুঙ্কার দেয়।
30সেইদিন তারা সমুদ্রের মত গর্জন করে ইসরায়েলের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে। চেয়ে দেখ ঐ দেশের দিকে! ঘোর অন্ধকার আর দুর্দশা! অন্ধকার গ্রাস করেছে আলোকে!

Markierung

Teilen

Kopieren

None

Möchtest du deine gespeicherten Markierungen auf allen deinen Geräten sehen? Erstelle ein kostenloses Konto oder melde dich an.

Video zu যিশাইয় 5