২ বংশাবলি 18

18
মহর্ষি মিখাইয়ার সাবধানবাণী
(১ রাজা 22:1-28)
1যিহুদীয়ারাজ যিহোশাফট যখন অত্যন্ত ঐশ্বর্যবান ও খ্যাতিসম্পন্ন হয়ে উঠলেন, তখন তিনি ইসরায়েলরাজ আহাবের পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে কুটুম্বিতা স্থাপন করলেন। 2কয়েক বছর পর তিনি আহাবের সঙ্গে দেখা করতে শমরিয়াতে গেলেন। রাজা আহাব যিহোশাফট ও তাঁর পারিষদদের সম্মানে অনেক মেষ ও বৃষ হত্যা করে বিরাট ভোজের আয়োজন করলেন। গিলিয়দে অবস্থিত রামোৎ নগর আক্রমণে যিহোশাফট যাতে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন তিনি সেই চেষ্টায় থাকলেন। 3তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমার সঙ্গে রামোৎ নগর আক্রমণ করতে যাবেন?যিহোশাফট বললেন, আপনি গেলে আমিও যেতে প্রস্তুত এবং আমার সৈন্যসামন্ত ও অশ্বারোহীবাহিনীও প্রস্তুত। 4কিন্তু তার আগে জানতে হবে, প্রভু পরমেশ্বরের ইচ্ছা কি?
5কাজেই ইসরায়েলরাজ আহাব প্রায় চারশো জন প্রবক্তা নবীকে ডাকলেন এবং তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, আমি রামোৎ আক্রমণ করব কি করব না?তাঁরা বললেন,আক্রমণ করুন। ঈশ্বর আপনাকে বিজয়ী করবেন।
6কিন্তু যিহোশাফট জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে কি আর কোন নবী নেই, যার মাধ্যমে আমরা পরমেশ্বরের নির্দেশ জানতে পারি?
7রাজা আহাব বললেন, হ্যাঁ আর একজন আছেন। তিনি হলেন ইমলার পুত্র মিখাইয়া। কিন্তু আমি তাঁকে বরদাস্ত করতে পারি না। তিনি কখনও আমার পক্ষে ভাল কোন কথা বলেন না, সব সময় কিছু না কিছু অমঙ্গলের কথা বলেন।
যিহোশাফট বললেন, মহারাজের মুখে এ কথা শোভা পায় না।
8রাজা আহাব তখন রাজদরবারের একজন রাজপুরুষকে ডেকে সত্বর নবী মিখাইয়াকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে নির্দেশ দিলেন।
9দুই রাজা–যিহুদীয়ারাজ ও ইসরায়েলরাজ রাজপোষাকে সজ্জিত হয়ে শমরিয়ার তোরণের সামনে খোলা মাঠে সিংহাসনে বসেছিলেন এবং নবীরা সকলে তাঁদের সামনে ভাবোক্তি করছিলেন। 10এঁদের মধ্যে একজন, কেনানার পুত্র সিদিকিয় এক জোড়া লোহার শিং তৈরী করে আহাবকে বললেন, শুনুন পরমেশ্বর বলছেন, এইগুলি নিয়ে আপনি সিরিয়ার সৈন্যদলের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করবেন। 11অন্য নবীরাও সেই কথাই বললেন, রামোতের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করুন। আপনার জয় সুনিশ্চিত। প্রভু পরমেশ্বর আপনাকে বিজয়ী করবেন।
12ইতিমধ্যে যে রাজপুরুষ মিখাইয়াকে আনতে গিয়েছিলেন, তিনি নবীকে বললেন, দেখুন, অন্যান্য নবীরা সকলেই একবাক্যে মহারাজের সাফল্যের কথা বলেছেন। দেখবেন, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আপনিও মহারাজের সাফল্যের কথাই বলবেন।
13কিন্তু মিখাইয়া বললেন, সদাজাগ্রত প্রভুর দিব্য, তিনি আমাকে যা প্রত্যাদেশ করবেন, আমি তা-ই বলব।
14রাজা আহাবের কাছে নবী এলে রাজা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, নবী মিখাইয়া, রাজা যিহোশাফট ও আমি রামোৎ নগর আক্রমণ করতে কি যাব? মিখাইয়া বললেন,
হ্যাঁ আক্রমণ করুন। আপনারা নিশ্চয়ই জয়ী হবেন প্রভু পরমেশ্বর আপনাদের বিজয়ী করবেন।
15কিন্তু রাজা আহাব তাঁকে বললেন, তুমি যখন পরমেশ্বরের নামে আমার কাছে কিছু বলবে, তখন সত্য কথা বলবে। কতবার তোমাকে একথা বলতে হবে?
16মিখাইয়া বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি ইসরায়েলীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালকহীন মেষের মত পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরছে। প্রভু পরমেশ্বর বলছেন, এদের কোন নেতা নেই। এদের শান্তিতে বাড়ী ফিরে যেতে দাও।#গণনা 27:17; যিহি 34:5; মথি 9:36; মার্ক 6:34
17আহাব তখন যিহোশাফটকে বললেন, দেখলেন তো? আমি কি বলি নি যে লোকটা আমার সম্বন্ধে কখনও কোন ভাল কথা বলে না? সব সময় কিছু না কিছু অমঙ্গলের কথা বলবেই?
18মিখাইয়া বলে চললেন, এবার শুনুন, প্রভু পরমেশ্বর কি বলছেন! আমি দেখলাম, প্রভু পরমেশ্বর স্বর্গে তাঁর সিংহাসনে বসে আছেন। তাঁর দুপাশে তাঁর সমগ্র দূতবাহিনী দাঁড়িয়ে আছেন। 19প্রভু দূতদের জিজ্ঞাসা করলেন, রামোৎ-এ নিহত হবার জন্য কে আহাবকে প্রতারণা করে ভুলিয়ে নিয়ে যাবে? দূতেরা নানা জনে নানা কথা বলতে লাগলেন। 20শেষে একটি আত্মা প্রভু পরমেশ্বরের সামনে এসে বললেন, আমি ওকে ভুলিয়ে নিযে যাব। প্রভু পরমেশ্বর জিজ্ঞাসা করলেন, কি ভাবে? 21আত্মাটি বললেন, আমি আহাবের সমস্ত প্রবক্তা নবীদের দিয়ে মিথ্যা কথা বলাব। প্রভু বললেন, যাও, তাকে প্রতারিত কর। তুমিই পারবে।
22সব শেষে মিখাইয়া বললেন, এই হচ্ছে প্রকৃত ঘটনা। প্রভু পরমেশ্বর স্বয়ং আপনার বিরুদ্ধে মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করেছেন বলেই তিনি আপনার প্রবক্তা নবীদের দিয়ে মিথ্যা বলিয়েছেন। আপনার সর্বনাশ অনিবার্য!
23তখন নবী সিদিকিয় মিখাইয়ার কাছে গিয়ে তাঁর গালে এক চড় মেরে বললেন, প্রভু পরমেশ্বরের আত্মা কখন আমাকে ছেড়ে তোমার কাছে গিয়ে কথা বললেন?
24মিখাইয়া বললেন, যেদিন তোমাকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য অন্দর মহলে গিয়ে লুকাতে হবে, সেদিনই জানবে।
25রাজা আহাব তখন তাঁর একজন রাজকর্মচারীকে বললেন ওকে বন্দী করে রাজ্যপাল আমোন ও যুবরাজ যোয়াশের কাছে নিয়ে যাও। 26তাঁদের বল, একে বন্দী করে রাখতে। যতদিন না আমি নিরাপদে ফিরে আসি, ততদিন একে একটু রুটি আর জল খেতে দেবে।
27মিখাইয়া বলে উঠলেন, যদি আপনি নিরাপদে ফেরেন, তাহলে প্রমাণ হবে যে প্রভু আমার মুখ দিয়ে কথা বলেন নি। তারপর জনতাকে উদ্দেশ করে বললেন, তোমরা শুনে রাখ এ কথা।
আহাবের মৃত্যু
(১ রাজা 22:29-35)
28ইসরায়েলরাজ আহাব ও যিহুদীয়ারাজ যিহোশাফট গিলিয়দ দেশের রামোৎ নগর আক্রমণের অভিযানে বেরিয়ে গেলেন। 29আহাব যিহোশাফটকে বললেন, আমি ছদ্মবেশে যু্দ্ধে যাব, আপনি কিন্তু রাজবেশেই থাকবেন। এই কথামত ইসরায়েলরাজ ছদ্মবেশে যুদ্ধে গেলেন।
30সিরিয়ার রাজা রথী সেনাপতিদের আদেশ দিয়েছিলেন যেন তাঁরা ইসরায়েলরাজ ছাড়া আর কাউকে আক্রমণ না করেন। 31তাই যখন তাঁরা রাজা যিহোশাফটকে দেখলেন, তখন তাঁকে ইসরায়েলরাজ ভেবে আক্রমণ করলেন। কিন্তু তিনি চীৎকার করে উঠলে প্রভু পরমেশ্বর তাঁকে উদ্ধার করলেন। তাঁর প্রতি আক্রমণের মোড় অন্যদিকে ঘুরে গেল। 32রথী সেনাপতিরা দেখলেন, ইনি ইসরায়েলরাজ নন, তাই তাঁকে আর আক্রমণ করলেন না। 33এদিকে একজন সিরীয় সৈন্য আন্দাজে একটি তীর ছুড়লে হঠাৎই সেটা রাজা আহাবের বর্মের জোড়ের মধ্যে দিয়ে শরীরে বিদ্ধ হয়ে গেল। তিনি আহত হয়ে সারথিকে বললেন, রথ ঘোরাও, আমাকে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে চল। 34তুমুল যুদ্ধ চলল। সিরিয়দের সামনে রাজাকে রথে হেলান দিয়ে খাড়া করে রাখা হল। সন্ধ্যাবেলায় তিনি মারা গেলেন।

Markierung

Teilen

Kopieren

None

Möchtest du deine gespeicherten Markierungen auf allen deinen Geräten sehen? Erstelle ein kostenloses Konto oder melde dich an.