YouVersion Logo
Search Icon

লূকলিখিত সুসমাচার 12

12
ফরীশীদের মতো হয়ো না
1এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হল। প্রচণ্ড ভীড়ের চাপে ধাক্কা-ধাক্কি করে একে অপরের উপর পড়তে লাগল। তখন তিনি প্রথমে তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ফরীশীদের খামির থেকে সাবধান থেকো। 2এমন কিছুই লুকানো নেই যা প্রকাশ পাবে না, আর এমন কিছুই গুপ্ত নেই যা জানা যাবে না। 3তাই তোমরা অন্ধকারে যা বলছ তা আলোতে শোনা যাবে। তোমরা গোপন কক্ষে ফিস্-ফিস্ করে কানে কানে যা বলবে তা বাড়ির ছাদের ওপর থেকে ঘোষণা করা হবে।”
কেবল ঈশ্বরকে ভয় কর
(মথি 10:28-31)
4কিন্তু হে আমার বন্ধুরা, “আমি তোমাদের বলছি, যারা তোমাদের দেহটাকে ধ্বংস করে দিতে পারে, কিন্তু এর বেশী কিছু করতে পারে না তাদের তোমরা ভয় করো না। 5তবে কাকে ভয় করবে তা আমি তোমাদের বলে দিচ্ছি। তোমাদের মেরে ফেলার পর নরকে পাঠাবার ক্ষমতা যাঁর আছে, তাঁকেই ভয় কর। হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তাঁকেই ভয় করো।
6“পাঁচটা চড়াই পাখি কি মাত্র কয়েক পয়সায় বিক্রি হয় না? তবু ঈশ্বর তার একটাকেও ভুলে যান না। 7এমন কি তোমাদের মাথার প্রতিটি চুল গোনা আছে। ভয় নেই, বহু চড়াই পাখির চেয়ে তোমাদের মূল্য অনেক বেশী।
যীশুর জন্যে লজ্জা পেও না
(মথি 10:32-33; 12:32; 10:19-20)
8“কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ অন্য লোকদের সামনে আমাকে স্বীকার করে, মানবপুত্রও ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের সামনে তাকে স্বীকার করবেন। 9কিন্তু যে কেউ সর্বসাধারণের সামনে আমায় অস্বীকার করবে, ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের সামনে তাদের অস্বীকার করা হবে।
10“মানবপুত্রের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তাকে ক্ষমা করা হবে; কিন্তু কেউ পবিত্র আত্মার নামে নিন্দা করলে তাকে ক্ষমা করা হবে না।
11“তারা তখন তোমাদের সমাজ-গৃহের সমাবেশে শাসনকর্তাদের বা কর্ত্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিদের সামনে হাজির করবে, তখন কিভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করবে বা কি বলবে তা নিয়ে চিন্তা করো না। 12কারণ সেই সময় কি বলতে হবে তা পবিত্র আত্মা তোমাদের সেইক্ষণেই শিখিয়ে দেবেন।”
স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে যীশুর সতর্কবাণী
13এরপর সেই ভীড়ের মধ্য থেকে একজন লোক যীশুকে বলল, “গুরু, উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের যে সম্পত্তি রয়েছে তা আমার ভাইকে আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে বলুন।”
14কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “বিচারকর্তা হিসাবে কে তোমাদের ওপর আমায় নিয়োগ করেছে?” 15এরপর যীশু লোকদের বললেন, “সাবধান! সমস্ত রকম লোক থেকে নিজেদের দূরে রাখ, কারণ মানুষের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি থাকলেও তার জীবন তার সম্পত্তির ওপর নির্ভর করে না।”
16তখন তিনি তাদের একটি দৃষ্টান্ত দিলেন: “একজন ধনবান লোকের জমিতে প্রচুর ফসল হয়েছিল। 17এই দেখে সে মনে মনে বলল, ‘আমি কি করব? এতো ফসল রাখার জায়গা তো আমার নেই।’
18“এরপর সে বলল, ‘আমি এই রকম করব; আমার যে গোলাঘরগুলো আছে তা ভেঙে ফেলে তার থেকে বড় গোলাঘর বানাবো; আর সেখানেই আমার সমস্ত ফসল ও জিনিস মজুত করব। 19আর আমার প্রাণকে বলব, হে প্রাণ, অনেক বছরের জন্য অনেক ভাল ভাল জিনিস তোমার জন্য সঞ্চয় করা হয়েছে। এখন আরাম করে খাও-দাও, স্ফূর্তি কর!’
20“কিন্তু ঈশ্বর তাকে বললেন, ‘ওরে মূর্খ! আজ রাতেই তোমার প্রাণ কেড়ে নেওয়া হবে; আর তুমি যা কিছু আয়োজন করেছ তা কে ভোগ করবে?’
21“যে লোক নিজের জন্য ধন সঞ্চয় করে কিন্তু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধনবান নয়, তার এইরকম হয়।”
ঈশ্বরের রাজ্যের প্রথম স্থান
(মথি 6:25-34, 19-21)
22এরপর যীশু তাঁর অনুগামীদের বললেন, “তাই আমি তোমাদের বলছি, কি খাব বলে প্রাণের বিষয়ে বা কি পরব বলে শরীরের বিষয়ে চিন্তা করো না। 23কারণ খাদ্যবস্তু থেকে প্রাণ অনেক মূল্যবান এবং পোশাক-আশাকের থেকে দেহের গুরুত্ব অনেক বেশী। 24কাকদের বিষয় চিন্তা কর, তারা বীজও বোনে না বা ফসলও কাটে না। তাদের কোন গুদাম বা গোলাঘর নেই, তবু ঈশ্বরই তাদের আহার যোগান। এইসব পাখিদের থেকে তোমরা কত অধিক মূল্যবান! 25তোমাদের মধ্যে কে দুশ্চিন্তা করে নিজের আয়ু এক ঘন্টা বাড়াতে পারে? 26এই সামান্য কাজটাই যদি করতে না পার তবে বাকী সব বিষয়ের জন্য এত চিন্তা কর কেন?
27“ছোট্ট ছোট্ট লিলি ফুলের কথা চিন্তা কর দেখি, তারা কিভাবে বেড়ে ওঠে। তারা পরিশ্রমও করে না, সুতাও কাটেনা। তবু আমি তোমাদের বলছি, এমন কি রাজা শলোমন তাঁর সমস্ত প্রতাপ ও গৌরবে মণ্ডিত হয়েও এদের একটার মতোও নিজেকে সাজাতে পারেন নি। 28মাঠে যে ঘাস আজ আছে আর কাল উনুনে ফেলে দেওয়া হবে, ঈশ্বর তা যদি এত সুন্দর করে সাজান, তবে হে অল্প বিশ্বাসীর দল, তিনি তোমাদের আরো কত না বেশী সাজাবেন!
29“আর কি খাবে বা কি পান করবে এ নিয়ে তোমরা চিন্তা করো না, এর জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন দরকার নেই। 30এই পৃথিবীর আর সব জাতির লোকেরা যাঁরা ঈশ্বরকে জানে না, তারাই এই সবের পিছনে ছোটে। কিন্তু তোমাদের পিতা ঈশ্বর জানেন যে এসব জিনিস তোমাদের প্রয়োজন আছে। 31তার চেয়ে বরং তোমরা ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সচেষ্ট হও তাহলে এসবই ঈশ্বর তোমাদের জোগাবেন।
অর্থকে বিশ্বাস করো না
32“ক্ষুদ্র মেষপাল! তোমরা ভয় পেও না, কারণ তোমাদের পিতা আনন্দের সাথেই সেই রাজ্য তোমাদের দেবেন, এটাই তাঁর ইচ্ছা। 33তোমাদের সম্পদ বিক্রি করে অভাবীদের দাও। নিজেদের জন্য এমন টাকার থলি তৈরী কর যা পুরানো হয় না, স্বর্গে এমন ধনসঞ্চয় কর যা শেষ হয় না, সেখানে চোর ঢুকতে পারে না বা মথ কাটে না। 34কারণ যেখানে তোমাদের সম্পদ সেখানেই তোমাদের মনও পড়ে থাকবে।
সর্বদাই প্রস্তত থাক
(মথি 24:42-44)
35“তোমরা কোমর বেঁধে বাতি জ্জ্বালিয়ে নিয়ে প্রস্তুত থাক। 36তোমরা এমন লোকদের মতো হও যারা তাদের মনিব বিয়ে বাড়ি থেকে কখন ফিরে আসবে তারই অপেক্ষায় থাকে; যেন তিনি ফিরে এসে দরজায় কড়া নাড়লেই তখনই তাঁর জন্য দরজা খুলে দিতে পারে। 37ধন্য সেই সব দাস, মনিব এসে যাদের জেগে প্রস্তুত থাকতে দেখবেন। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তিনি নিজে পোশাক বদলে প্রস্তুত হয়ে তাদের খেতে বসাবেন, এবং নিজেই পরিবেশন করবেন। 38তিনি রাতের দ্বিতীয় প্রহরে ও তৃতীয় প্রহরে এসে যদি তাদের প্রস্তুত থাকতে দেখেন তাহলে ধন্য তারা।
39“কিন্তু একথা জেনে রেখো, চোর কোন সময় আসবে তা যদি বাড়ির কর্তা জানতে পারে তাহলে সে তার বাড়িতে সিঁদ কাটতে দেবে না। 40তাই তোমরাও প্রস্তুত থেকো, কারণ তোমরা যে সময় আশা করবে না, মানবপুত্র সেই সময় আসবেন।”
বিশ্বস্ত দাস কে?
(মথি 24:45-51)
41তখন পিতর বললেন, “প্রভু এই দৃষ্টান্তটি কি আপনি শুধু আমাদের জন্য বললেন, না এটা সকলের জন্য?”
42তখন প্রভু বললেন, “সেই বিশ্বস্ত ও বিচক্ষণ কর্মচারী কে, যাকে তার মনিব তাঁর অন্য কর্মচারীদের সময়মতো খাবার ভাগ করে দেবার ভার দেবেন? 43ধন্য সেই দাস, যাকে তার মনিব এসে বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে দেখবেন। 44আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মনিব সেই কর্মচারীর ওপর তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দেখাশোনার ভার দেবেন।
45“কিন্তু সেই কর্মচারী যদি মনে মনে বলে, আমার মনিবের আসতে এখন অনেক দেরী আছে। এই মনে করে সে যদি তার অন্য দাস-দাসীদের মারধর করে আর পানাহারে মত্ত হয়, 46তাহলে যে দিন ও যে সময়ের কথা সে একটুকু চিন্তাও করবে না, সেই দিন ও সেই সময়েই তার মনিব এসে হাজির হবেন। তার মনিব তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবেন; আর অবিশ্বাসীদের জন্য যে জায়গা ঠিক করা হয়েছে, তার স্থান সেখানেই হবে।
47“যে দাস তার মনিবের ইচ্ছা জেনেও প্রস্তুত থাকে নি, অথবা যে তার মনিবের ইচ্ছানুসারে কাজ করে নি, সেই দাস কঠোর শাস্তি পাবে। 48কিন্তু যে তার মনিব কি চায় তা জানে না, এই না জানার দরুন এমন কাজ করে ফেলেছে যার জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিৎ, সেই দাসের কম শাস্তি হবে। যাকে বেশী দেওয়া হয়েছে, তার কাছ থেকে বেশী পাবার আশা করা হবে। যার ওপর বেশী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, লোকেরা তার কাছ থেকে অধিক চাইবে।”
যীশুর বিষয়ে লোকেরা একমত হবে না
(মথি 10:34-36)
49“আমি পৃথিবীতে আগুন নিক্ষেপ করতে এসেছি, আহা, যদি তা আগেই জ্বলে উঠত! 50এক বাপ্তিস্মে আমায় বাপ্তাইজিত হতে হবে, আর যতক্ষণ না তা হচ্ছে, আমি ব্যাকুল হয়ে উঠেছি। 51তোমরা কি মনে কর এই পৃথিবীতে আমি শান্তি স্থাপন করতে এসেছি? না, আমি তোমাদের বলছি, বরং বিভেদ ঘটাতে এসেছি। 52কারণ এখন থেকে একই পরিবারে পাঁচজন থাকলে তারা পরস্পরের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। তিনজন দুজনের বিরুদ্ধে যাবে, আর দুজন তিনজনের বিরুদ্ধে যাবে।
53বাবা ছেলের বিরুদ্ধে
ও ছেলে বাবার বিরুদ্ধে যাবে।
মা মেয়ের বিরুদ্ধে
ও মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে যাবে।
শাশুড়ী বৌমার বিরুদ্ধে
ও বৌমা শাশুড়ীর বিরুদ্ধে যাবে।”#12:53 দ্রষ্টব্য মীখা 7:6
সময়কে বুঝতে হবে
(মথি 16:2-3)
54এরপর যীশু সমবেত জনতার দিকে ফিরে বললেন, “পশ্চিমদিকে মেঘ জমতে দেখে তোমরা বলে থাকো, ‘বৃষ্টি আসলো বলে, আর তা-ই হয়।’ 55যখন দক্ষিণা বাতাস বয়, তোমরা বলে থাক, ‘গরম পড়বে,’ আর তা-ই হয়। 56ভণ্ডের দল! তোমরা পৃথিবী ও আকাশের চেহারা দেখে তার অর্থ বুঝতে পার; কিন্তু এ কেমন যে তোমরা বর্তমান সময়ের অর্থ বুঝতে পার না?
সমস্যার সমাধান কর
(মথি 5:25-26)
57“যা কিছু ন্যায্য, নিজেরাই কেন তার বিচার কর না? 58তোমাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে তোমরা যখন বিচারকের কাছে যাও, তখন পথেই তা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর। নতুবা সে হয়তো তোমাকে বিচারকের কাছে টেনে নিয়ে যাবে, বিচারক তোমাকে সেপাইয়ের হাতে দেবে আর সেপাই তোমায় কারাগারে দেবে। 59আমি তোমাকে বলছি, শেষ পয়সাটি না দেওয়া পর্যন্ত তুমি কোন মতেই কারাগার থেকে ছাড়া পাবে না।”

Highlight

Share

Copy

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in