YouVersion Logo
Search Icon

১ রাজাবলি 11

11
রাজা শলোমনের অবাধ্যতা ও তার ফল
1রাজা শলোমন বহু বিজাতীয় রমণীর প্রেমে পড়েছিলেন। মিশর রাজকন্যাকে ছাড়াও তিনি হিত্তিয়, মোয়াবী, আম্মোনী, ইদোমী ও সিদোনী নারীদের বিবাহ করেছিলেন।#দ্বি.বি. 17:17 2পরমেশ্বর এই সব জাতির সঙ্গে ইসরায়েলীদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থান করতে নিষেধ করেছিলেন? কারণ এদের বিবাহ করলে তারা তাদের দেবদেবীর প্রতি ইসরায়েলীদের আনুগত্য আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এদের বিয়ে করেছিলেন।#যাত্রা 34:16; দ্বি.বি. 7:3-4
3শলোমন সাতশো রাজকন্যাকে বিবাহ করেছিলেন এবং তিনশো জন উপপত্নী রেখেছিলেন। তারাই তাঁকে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিপথে নিয়ে গিয়েছিল। 4এদের প্ররোচনায় রাজা শলোমন বৃদ্ধ বয়সে অন্য দেবতাদের অনুগামী হলেন। তাঁর পিতার মত তিনিও তাঁর আরাধ্য প্রভু পরমেশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠ রইলেন না। 5তিনি সীদোনের দেবী অষ্টারোৎ ও আম্মোনীদের জঘন্য দেবতা মিল্‌কমের পূজা করতে লাগলেন। 6এইভাবে পরমেশ্বরের বিরুদ্ধে তিনি পাপ করলেন। পিতা দাউদের মত একাগ্রচিত্তে তিনি আর প্রভুর অনুগত রইলেন না। 7জেরুশালেমের পূর্বদিকের পাহাড়ে মোয়াবের জঘন্য দেবতা কেমেশ এবং আম্মোনীদের জঘন্য দেবতা মেল্‌কমের ‘পূজার থান’#11:7 পূজার বেদী তৈরী করে দিলেন। 8তিনি আরও অনেক ‘থান’ তৈরী করে দিয়েছিলেন যাতে তাঁর বিজাতীয়া স্ত্রীরা তাদের দেবতাদের কাছে হোমবলি ও ধূপ-দীপ দিতে পারে। 9-10এমন কি ইসরায়েলের আরাধ্য প্রভু পরমেশ্বর শলোমনকে দুবার দর্শনও দিয়েছিলেন এবং বিজাতীয় দেবতাদের পূজা করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শলোমন পরমেশ্বরের আদেশ অমান্য করলেন, দূরে সরে গেলেন তাঁর কাছ থেকে। পরমেশ্বর ক্রুদ্ধ হলেন শলোমনের উপর। 11শলোমনকে বললেনঃ যেহেতু তুমি স্বেচ্ছায় আমার সঙ্গে স্থাপিত সম্বন্ধ ভঙ্গ করছ, আমার অনুশাসন অমান্য করেছ সেইজন্য আমি তোমার কাছ থেকে রাজ্য কেড়ে নিয়ে তোমারই একজন কর্মচারীকে দেব। 12তোমার পিতা দাউদের খাতিরে তোমার জীবনকালে নয় কিন্তু তোমার পুত্রের হাত থেকে রাজ্য কেড়ে নেব। 13তবে গোটা রাজ্য অবশ্য কেড়ে নেব না, আমর দাস দাউদ ও আমার মনোনীত নগরী জেরুশালেমের মুখ চেয়ে একটি গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব তাকে দেব।
শলোমনের শত্রুপক্ষ
14প্রভু পরমেশ্বর ইদোম রাজবংশের হদদ্‌কে শলোমনের বিরুদ্ধে দাঁড় করালেন। 15-16এর বহুকাল আগে দাউদ ইদোম অধিকার করার পর তাঁর সেনাপতি যোয়াব যুদ্ধে নিহতদের কবর দেবার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে সৈন্যদলসহ তিনি ছমাস ছিলেন। এই সময় তাঁরা ইদোমের সমস্ত পুরুষ অধিবাসীকে হত্যা করেন। 17কেবলমাত্র হদ্‌দ ও তাঁর পিতার কয়েক জন কর্মাচারী মিশরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেইসময় হদ্‌দ ছিলেন নেহাৎই শিশু। 18তাঁরা মিদিয়ন থেকে পারাণে চলে যান। সেখানে আরও কিছু লোক তাঁদের দলে জুটে যায়।
তারপর তাঁরা মিশরে গিয়ে মিশররাজ ফারাওয়ের কাছে আশ্রয় নেন। ফারাও তাঁকে থাকার জন্য বাড়ি ও জমি দেন এবং তাঁর ভরণ-পোষণের জন্য কিছু বৃত্তি দেন। 19কালক্রমে হদ্‌দ ফারাওয়ের খুব প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। কাজেই ফারাও তাঁর রাণী তহ্‌পনেষের বোনের সঙ্গে হদদের বিয়ে দেন। 20গেনুবৎ নামে তাঁদের একটি পুত্র জন্ম গ্রহণ করে। রাণী তহ্‌পনেষের কাছেই রাজপ্রাসাদে সে মানুষ হয়। সেখানে রাজপুত্রদের সাথেই সে থাকত। 21মিশরে থাকতেই হদদ্‌ দাউদ ও তাঁর সেনাপতি যোয়াবের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলেন। তাই তিনি ফারাওয়ের কাছে গিয়ে বললেন, এবার আমায় বিদায় দিন, আমি দেশে ফিরে যাব।
22ফারাও তাঁকে বললেন, এখানে তোমার কিসের অভাব যে তুমি দেশে ফিরে যেতে চাইছ?
হদদ্‌ রাজাকে বললেন, কিছুরই অভাব নেই। তবু দয়া করে আমায় যেতে দিন। ইদোমরাজ হদদ্‌ ছিলেন ইসরায়েলের চরম শত্রু।
23ঈশ্বর শলোমনের বিরুদ্ধে আরও একজন শত্রু সৃষ্টি করলেন। সে হল ইলিয়াদার পুত্র রেষোণ। তিনি তাঁর মনিব সোবার রাজা হদদেষরের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন 24এবং একটি দস্যুদল গড়ে তুলে তাদের দলপতি হন (দাউদ যেবার হদদেষরকে পরাস্ত করে সিরীয় সেনাবাহিনীকে হত্যা করেন, ঘটনাটি ঘটে সেইসময়)। রেষোণ তাঁর দলবল নিয়ে দামাসকাসে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন এবং তাঁর লোকেরা তাঁকে সিরিয়ার রাজসিংহাসনে বসায়। 25শলোমনের রাজত্ব কালে ইনিও ছিলেন ইসরায়েলের ঘোরতর শত্রু।
যারবিয়ামের কাছে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি
26আর একজন ব্যক্তি শলোমনের শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি হলেন তাঁরই একজন কর্মচারী এবং সরোদা নিবাসী ইফ্রয়িম বংশীয় নবাটের পুত্র যারবিয়াম। এঁর মায়ের নাম সরূয়া। ইনি ছিলেন বিধবা। এই যারবিয়ামও শলোমনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। 27তাঁর বিদ্রোহের কাহিনী হলঃ
শলোমন জেরুশালেমের পূর্বদিকের নীচু জমি ভরাট করেছিলেন এবং নগরের প্রাচীরের ভগ্নস্থানগুলি মেরামত করাচ্ছিলেন। 28সেইসময় যারবিয়াম ছিলেন একজন কর্মঠ যুবক। তাঁর কঠোর পরিশ্রমের কাজ দেখে শলোমন তাঁকে মনঃশী ও ইফ্রয়িম গোষ্ঠীর এলাকার সমস্ত বেগার মজুরদের কাজকর্ম তদারক করার ভার দিলেন। 29একদিন যারবিয়াম জেরুশালেম থেকে বাইরে যাচ্ছিলেন। পথে শীলোনিবাসী নবী অহিয়র সঙ্গে তাঁর দেখা হল। অহিয়র পরণে ছিল নতুন পোষাক।
30নির্জন পথে দুজনের দেখা হতে অহিয় নিজের পরণের পোষাকটি ছিঁড়ে বারো টুকরো করে ফেললেন, 31এবং যারবিয়ামকে বললেন, এর দশটা টুকরো তুমি নাও। কারণ ইসরায়েলের পরমেশ্বর প্রভু তোমাকে বলেছেনঃ আমি শলোমনের হাত থেকে রাজ্য কেড়ে নেব এবং দশটি গোষ্ঠীর উপর কর্তৃত্ব তোমাকে দেব। 32আর আমার দাস দাউদের মুখ চেয়ে এবং ইসরায়েল দেশের মধ্যে আমার মনোনীত নিজস্ব নগরী জেরুশালেমের মুখ চেয়ে শুধু একটি মাত্র গোষ্ঠীর উপর শলোমনের কর্তৃত্ব দেব। 33সে আমাকে পরিত্যাগ করে সীদোনীদের দেবী অষ্টারৎ, মোয়াবের দেবতা কেমেশ এবং আম্মোনীদের দেবতা মিলকমের পূজা করেছে। শলোমন আমার অবাধ্য হয়েছে,অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়েছে এবং তার পিতা দাউদ যেমন আমার বিধান ও অনুশাসন পালন করত, সে তা করে নি। 34তবুও সমগ্র রাজ্য আমি তার কাছ থেকে কেড়ে নেব না, যতদিন সে জীবিত থাকবে আমি তাকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত রাখব। আমার মনোনীত দাস দাউদের খাতিরে আমি এই কাজ করব, সে আমার বিধান ও অনুশাসন পালন করত। 35আমি শলোমনের পুত্রের হাত থেকে রাজ্য কেড়ে নিয়ে তোমাকে দেব দশ গোষ্ঠীর উপর কর্তৃত্ব 36কিন্তু আমার উপাসনার জন্য আমার মনোনীত জেরুশালেমে আমার দাস দাউদের একজন বংশধর যাতে রাজত্ব করতে পারে সেইজন্য তাকে একটি গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব দেব। 37যারবিয়াম তোমাকে আমি ইসরায়েলের রাজা করার জন্য এবং যতদূর তোমার ইচ্চা ততখানি এলাকার উপর রাজত্ব করার জন্য তোমাকে নিযুক্ত করব। 38তুমি যদি সর্বান্তঃকরণে আমার নির্দেশ পালন কর, আমার দাস দাউদের মত আমার বিধি ও অনুশাসন মেনে আমার প্রীতিজনক কাজ কর, তাহলে আমি চিরদিন তোমার সহায় থাকব। আমি তোমাকে ইসরায়েলের রাজা করব এবং দাউদের বংশের মত তোমার বংশধরদেরও তোমার মৃত্যুর পর রাজত্ব দান করব। 39শলোমনের পাপের জন্যই আমি দাউদের বংশধরদের দণ্ড দেব, তবে তা চিরকালের জন্য নয়।
40শলোমন যাববিয়ামকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি মিশরের রাজা শিশকের কাছে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং শলোমনের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।
শলোমনের মৃত্যু
(২ বংশা 9:29-31)
41শলোমনের সমস্ত কর্মের বিবরণ, তাঁর সমস্ত কীর্তি ও প্রজ্ঞার কথা ‘শলোমনের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা আছে।
42শলোমন জেরুশালেমে সমগ্র ইসরায়েলের উপর চল্লিশ বছর রাজত্ব করেন। 43পরে তাঁর মৃত্যু হলে দাউদ নগরে তাঁকে সমাধি দেওয়া হয়। তাঁর পুত্র রহবিয়াম তাঁর সিংহাসনে বসেন।

Highlight

Share

Copy

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in

Videos for ১ রাজাবলি 11