মথি ২৬
২৬
যীশুর শেষ দুঃখভোগ ও মৃত্যু #মার্ক ১৪; লূক ২২; যোহ ১২:১-৮; ১ করি ১১:২৩-২৫
1 যখন যীশু এই সকল কথা শেষ করিলেন, তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, 2 তোমরা জান, দুই দিন পরে নিস্তারপর্ব আসিতেছে, আর মনুষ্যপুত্র ক্রুশে বিদ্ধ হইবার জন্য সমর্পিত হইতেছেন। 3 তখন প্রধান যাজকেরা ও লোকদের প্রাচীনবর্গ কায়াফা নামক মহাযাজকের প্রাঙ্গণে একত্র হইল; 4 আর এই মন্ত্রণা করিল, যেন ছলে যীশুকে ধরিয়া বধ করিতে পারে। 5 কিন্তু তাহারা কহিল, পর্বের সময়ে নয়, পাছে লোকদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে।
যীশুর অভিষেক
6 যীশু যখন বৈথনিয়ায় কুষ্ঠ রোগী শিমোনের বাটীতে ছিলেন, 7 তখন একজন স্ত্রীলোক শ্বেত প্রস্তরের পাত্রে বহুমূল্য সুগন্ধি তৈল লইয়া তাঁহার নিকটে আসিল, এবং তিনি ভোজনে বসিলে তাঁহার মস্তকে ঢালিয়া দিল। 8 কিন্তু তাহা দেখিয়া শিষ্যেরা বিরক্ত হইয়া কহিলেন, এ অপব্যয় কেন? 9 ইহা ত অনেক টাকায় বিক্রয় করিয়া তাহা দরিদ্রদিগকে দেওয়া যাইত। 10 কিন্তু যীশু তাহা বুঝিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, স্ত্রীলোকটিকে কেন দুঃখ দিতেছ? এ ত আমার প্রতি সৎকার্য করিল। 11 কেননা দরিদ্রেরা তোমাদের কাছে সর্বদাই আছে, কিন্তু তোমরা আমাকে সর্বদা পাইবে না। 12 বস্তুতঃ আমার দেহের উপরে এই সুগন্ধি তৈল ঢালিয়া দেওয়াতে এ আমার সমাধির উপযোগী কর্ম করিল। 13 আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, সমুদয় জগতে যে কোন স্থানে এই সুসমাচার প্রচারিত হইবে, সেই স্থানে ইহার এই কর্মের কথাও ইহার স্মরণার্থে বলা যাইবে।
14 তখন বারো জনের মধ্যে একজন, যাহাকে ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা বলা যায়, সে প্রধান যাজকদের নিকটে গিয়া কহিল, 15 আমাকে কি দিতে চান, বলুন, আমি তাহাকে আপনাদের হস্তে সমর্পণ করিব। তাহারা তাহাকে ত্রিশ রৌপ্যখণ্ড তৌল করিয়া দিল, 16 আর সেই সময় অবধি সে তাঁহাকে সমর্পণ করিবার জন্য সুযোগ অন্বেষণ করিতে লাগিল।
নিস্তারপর্ব পালন ও প্রভুর ভোজ স্থাপন
17 পরে তাড়ীশুন্য রুটির পর্বের প্রথম দিন শিষ্যেরা যীশুর নিকটে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার নিমিত্ত আমরা কোথায় নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করিব? আপনার ইচ্ছা কি? 18 তিনি কহিলেন, তোমরা নগরে অমুক ব্যক্তির নিকট যাও, আর তাহাকে বল, গুরু কহিতেছেন, আমার সময় সন্নিকট; আমি তোমারই গৃহে আমার শিষ্যগণের সহিত নিস্তারপর্ব পালন করিব। 19 তাহাতে শিষ্যেরা যীশুর আদেশ অনুসারে কর্ম করিলেন, ও নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করিলেন।
20 পরে সন্ধ্যা হইলে তিনি সেই বারো জন শিষ্যের সহিত ভোজনে বসিলেন। 21 আর তাঁহাদের ভোজনের সময়ে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে সমর্পণ করিবে। 22 তখন তাঁহারা অত্যন্ত দুঃখিত হইয়া প্রত্যেক জন তাঁহাকে বলিতে লাগিলেন, প্রভু, সে কি আমি? 23 তিনি উত্তরে কহিলেন, যে আমার সঙ্গে ভোজনপাত্রে হাত ডুবাইল, সেই আমাকে সমর্পণ করিবে। 24 মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে যেমন লিখিত আছে, তেমনি তিনি যাইতেছেন; কিন্তু ধিক্ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা মনুষ্যপুত্র সমর্পিত হন; সেই মনুষ্যের জন্ম না হইলে তাহার পক্ষে ভাল ছিল। 25 তখন যে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে, সেই যিহূদা বলিল, রব্বি, সে কি আমি? তিনি তাঁহাকে কহিলেন, তুমিই বলিলে।
26 পরে তাঁহারা ভোজন করিতেছেন, এমন সময়ে যীশু রুটি লইয়া আশীর্বাদপূর্বক ভাঙ্গিলেন, এবং শিষ্যদিগকে দিলেন, আর কহিলেন, লও, ভোজন কর, ইহা আমার শরীর। 27 পরে তিনি পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্বক তাঁহাদিগকে দিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে ইহা হইতে পান কর; 28 কারণ ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পাতিত হয় #২৬:২৮ (বা) হইতেছে 29 আর আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, এখন অবধি আমি এই দ্রাক্ষাফলের রস আর কখনও পান করিব না, সেই দিন পর্যন্ত, যখন আমি আপন পিতার রাজ্যে তোমাদের সঙ্গে ইহা নূতনভাবে পান করিব।
30 পরে তাঁহারা গীত গান করিয়া বাহির হইয়া জৈতুন পর্বতে গেলেন। 31 তখন যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, এই রাত্রিতে তোমরা সকলে আমাতে বিঘ্ন পাইবে; কেননা লেখা আছে, “আমি পালরক্ষককে আঘাত করিব, তাহাতে পালের মেষেরা ছিন্নভিন্ন হইয়া যাইবে।” #সখ ১৩:৭ 32 কিন্তু উত্থিত হইলে পর আমি তোমাদের অগ্রে গালীলে যাইব। 33 পিতর উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, যদি সকলে আপনাতে বিঘ্ন পায়, আমি কখনও বিঘ্ন পাইব না। 34 যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য কহিতেছি, এই রাত্রিতে মোরগ ডাকিবার পূর্বে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করিবে। 35 পিতর তাঁহাকে কহিলেন, যদি আপনার সহিত মরিতেও হয়, কোন মতে আপনাকে অস্বীকার করিব না। সেইরূপ সকল শিষ্যই কহিলেন।
গেৎশিমানী বাগানে যীশুর মর্মান্তিক দুঃখ
36 তখন যীশু তাঁহাদের সহিত গেৎশিমানী নামক এক স্থানে গেলেন, আর আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, আমি যতক্ষণ ঐখানে গিয়া প্রার্থনা করি, ততক্ষণ তোমরা এইখানে বসিয়া থাক। 37 পরে তিনি পিতরকে এবং সিবদিয়ের দুই পুত্রকে সঙ্গে লইয়া গেলেন, আর দুঃখার্ত ও ব্যাকুল হইতে লাগিলেন। 38 তখন তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আমার প্রাণ মরণ পর্যন্ত দুঃখার্ত হইয়াছে; তোমরা এখানে থাক, আমার সঙ্গে জাগিয়া থাক। 39 পরে তিনি কিঞ্চিৎ অগ্রে গিয়া উবুড় হইয়া পড়িয়া প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে আমার পিতঃ, যদি হইতে পারে, তবে এই পানপাত্র আমার নিকট হইতে দূরে যাউক; তথাপি আমার ইচ্ছামত না হউক, তোমার ইচ্ছামত হউক। 40 পরে তিনি সেই শিষ্যদের নিকটে আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, আর তিনি পিতরকে কহিলেন, এ কি? এক ঘণ্টাও কি আমার সঙ্গে জাগিয়া থাকিতে তোমাদের শক্তি হইল না? 41 জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়; আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্বল। 42 পুনরায় তিনি দ্বিতীয় বার গিয়া এই প্রার্থনা করিলেন, হে আমার পিতঃ আমি পান না করিলে যদি ইহা দূরে যাইতে না পারে, তবে তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক। 43 পরে তিনি আবার আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, কেননা তাহাদের চক্ষু ভারী হইয়া পড়িয়াছিল। 44 আর তিনি পুনরায় তাহাদিগকে ছাড়িয়া গিয়া তৃতীয় বার পূর্বমত কথা বলিয়া প্রার্থনা করিলেন। 45 তখন তিনি শিষ্যদের নিকটে আসিয়া কহিলেন, এখন তোমরা নিদ্রা যাও, বিশ্রাম কর, দেখ, সময় উপস্থিত, মনুষ্যপুত্র পাপীদের হস্তে সমর্পিত হন। 46 উঠ, আমরা যাই; এই দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করিতেছে, সে নিকটে আসিয়াছে।
যীশু শত্রুদের হস্তে সমর্পিত হন
47 তিনি যখন কথা কহিতেছেন, দেখ, যিহূদা, সেই বারো জনের একজন, আসিল, এবং তাহার সঙ্গে অনেক লোক খড়্গ ও যষ্টি লইয়া প্রধান যাজকদের ও লোকদের প্রাচীনবর্গের নিকট হইতে আসিল। 48 যে তাঁহাকে সমর্পণ করিতেছিল, সে তাহাদিগকে এই সঙ্কেত বলিয়াছিল, আমি যাহাকে চুম্বন করিব, সে ঐ ব্যক্তি, তোমরা তাহাকে ধরিবে। 49 সে তখনই যীশুর নিকট গিয়া বলিল, রব্বি, নমস্কার, আর তাঁহাকে আগ্রহপূর্বক চুম্বন করিল। 50 যীশু তাহাকে কহিলেন, মিত্র, যাহা করিতে আসিয়াছ, কর। তখন তাহারা নিকটে আসিয়া যীশুর উপরে হস্তক্ষেপ করিয়া তাঁহাকে ধরিল। 51 আর দেখ, যীশুর সঙ্গীদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাত বাড়াইয়া খড়্গ বাহির করিলেন, এবং মহাযাজকের দাসকে আঘাত করিয়া তাহার একটা কান কাটিয়া ফেলিলেন। 52 তখন যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমার খড়্গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়্গ ধারণ করে, তাহারা খড়্গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে। 53 আর তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতার কাছে বিনতি করিলে তিনি এখনই আমার জন্য দ্বাদশ বাহিনী অপেক্ষা অধিক দূত পাঠাইয়া দিবেন না? 54 কিন্তু তাহা করিলে কেমন করিয়া শাস্ত্রের এই বচন সকল পূর্ণ হইবে যে, এইরূপ হওয়া আবশ্যক? 55 সেই সময়ে যীশু লোকসমূহকে কহিলেন, লোকে যেমন দস্যু ধরিতে যায়, তেমনি কি তোমরা খড়্গ ও যষ্টি লইয়া আমাকে ধরিতে আসিলে? আমি প্রতিদিন ধর্মধামে বসিয়া উপদেশ দিয়াছি, তখন ত আমাকে ধরিলে না। 56 কিন্তু এই সমস্ত ঘটিল, যেন ভাববাদিগণের লিখিত বচনগুলি পূর্ণ হয়। তখন শিষ্যেরা সকলে তাঁহাকে ছাড়িয়া পলাইয়া গেলেন।
মহাযাজকের সম্মুখে যীশুর বিচার
57 আর যাহারা যীশুকে ধরিয়াছিল, তাহারা তাঁহাকে মহাযাজক কায়াফার কাছে লইয়া গেল; সেই স্থানে অধ্যাপকেরা ও প্রাচীনবর্গ সমবেত হইয়াছিল। 58 আর পিতর দূরে থাকিয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ মহাযাজকের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত গমন করিলেন, এবং শেষে কি হয়, তাহা দেখিবার জন্য ভিতরে গিয়া পদাতিকগণের সঙ্গে বসিলেন। 59 তখন প্রধান যাজকগণ এবং সমস্ত মহাসভা যীশুকে বধ করিবার জন্য তাঁহার বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষ্য অন্বেষণ করিল, 60 কিন্তু অনেক মিথ্যাসাক্ষী আসিয়া যুটিলেও তাহা পাইল না। 61 অবশেষে দুই জন আসিয়া বলিল, এই ব্যক্তি বলিয়াছিল, আমি ঈশ্বরের মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেলিতে, আবার তিন দিনের মধ্যে গাঁথিয়া তুলিতে পারি। 62 তখন মহাযাজক উঠিয়া দাঁড়াইয়া তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কি কিছুই উত্তর দিবে না? তোমার বিরুদ্ধে ইহারা কি সাক্ষ্য দিতেছে? 63 কিন্তু যীশু নীরব রহিলেন। মহাযাজক তাঁহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্য দিতেছি, আমাদিগকে বল দেখি, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র? 64 যীশু উত্তরে কহিলেন, তুমিই বলিলে; আরও আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, এখন অবধি তোমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া থাকিতে এবং আকাশের মেঘরথে আসিতে দেখিবে। #গীত ১১০:১; দানি ৭:১৩ 65 তখন মহাযাজক আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, এ ঈশ্বর-নিন্দা করিল, আর সাক্ষীতে আমাদের কি প্রয়োজন? দেখ, এখন তোমরা ঈশ্বর-নিন্দা শুনিলে; 66 তোমাদের কি বিবেচনা হয়? তাহারা উত্তর করিয়া কহিল, এ মরিবার যোগ্য। 67 তখন তাহারা তাঁহার মুখে থুথু দিল ও তাঁহাকে ঘুসি মারিল; 68 আর কেহ কেহ তাঁহাকে প্রহার করিয়া কহিল, রে খ্রীষ্ট, আমাদের নিকটে ভাববাণী বল্, কে তোকে মারিল?
পিতর যীশুকে তিন বার অস্বীকার করেন
69 ইতিমধ্যে পিতর বাহিরে প্রাঙ্গণে বসিয়াছিলেন; আর একজন দাসী তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিল, তুমিও সেই গালীলীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে। 70 কিন্তু তিনি সকলের সাক্ষাতে অস্বীকার করিয়া কহিলেন, তুমি কি বলিতেছ, আমি বুঝিতে পারিলাম না। 71 তিনি ফটকের নিকটে গেলে আর এক দাসী তাঁহাকে দেখিয়া সেই স্থানের লোকদিগকে কহিল, এই ব্যক্তি সেই নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল। 72 তিনি আবার অস্বীকার করিলেন, দিব্য করিয়া কহিলেন, আমি সেই ব্যক্তিকে চিনি না। 73 আর অল্পক্ষণ পরে, যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহারা আসিয়া পিতরকে কহিল, সত্যই তুমিও তাহাদের একজন, কেননা তোমার ভাষা তোমার পরিচয় দিতেছে। 74 তখন তিনি অভিশাপপূর্বক শপথ করিয়া বলিতে লাগিলেন, আমি সেই ব্যক্তিকে চিনি না। 75 তখনই মোরগ ডাকিয়া উঠিল। তাহাতে যীশু এই যে কথা বলিয়াছিলেন, ‘মোরগ ডাকিবার পূর্বে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করিবে,’ তাহা পিতরের মনে পড়িল; এবং তিনি বাইরে গিয়া অত্যন্ত রোদন করিলেন।
Šiuo metu pasirinkta:
মথি ২৬: বিবিএস-গসপেল
Paryškinti
Dalintis
Kopijuoti

Norite, kad paryškinimai būtų įrašyti visuose jūsų įrenginiuose? Prisijunkite arba registruokitės
Copyright © 2023 Bangladesh Bible Society. All rights reserved.