২ রাজাবলি 18
18
যিহুদীয়ারাজ হিষ্কিয়
(২ বংশা 29:1-2; 3:1)
1এলার পুত্র ইসরায়েলরাজ হোশেয়র রাজত্বকালের তৃতীয় বছরে আহসের পুত্র হিষ্কিয় যিহুদীয়ার রাজা হন। 2তখন তাঁর বয়স ছিল পঁচিশ বছর। তিনি ঊনত্রিশ বছর রাজত্ব করেন। তাঁর রাজধানী ছিল জেরুশালেম। তাঁর মা অবিয় ছিলেন সখরিয়ের কন্যা। 3হিষ্কিয় তাঁর পূর্বপুরুষ দাউদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে প্রভু পরমেশ্বরের প্রীতিজনক কাজ করেছিলেন। 4সমস্ত দেবস্থান, শিলাস্তম্ভ এবং আশেরা দণ্ড তিনি ধ্বংস করেছিলেন। এমন কি তিনি মোশির তৈরী পিতলের সর্পমূর্তিটিও ধ্বংস করেন। এই মূর্তিটির নাম ছিল নহুস্টন। তখনও পর্যন্ত ইসরায়েলীরা এর সামনে ভক্তিভরে ধূপধুনা দিত। 5ইসরায়েলের প্রভু পরমেশ্বরের উপরেই ছিল রাজা হিষ্কিয়ের অটল বিশ্বাস ও আস্থা। যিহুদীয়ার তাঁর মত রাজা আর কখনও হয় নি, তাঁর আগেও না, পরেও না। 6তিনি প্রভুর অনুগত ছিলেন, কখনও তাঁর অবাধ্য হন নি। মোশিকে প্রভু যে সমস্ত বিধি ব্যবস্থা ও অনুশাসন দিয়েছিলেন, সব তিনি সযত্নে পালন করে চলতেন। 7সেইজন্য প্রভু পরমেশ্বর তাঁর সহায় ছিলেন। তাই সব কাজেই তিনি সাফল্যলাভ করতেন। তিনি আসিরিয়ার সম্রাটের#18:7 ২ রাজা 17:6 দ্রষ্টব্য বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। 8ফিলিস্তিনীদের দেশ আক্রমণ করে গাজা ও তার পাশ্ববর্তী এলাকাসহ ছোট্ট গ্রাম থেকে শুরু করে বড় নগর পর্যন্ত তিনি দখল করেন।
9রাজা হিষ্কিয়ের রাজত্বের চতুর্থ বছরে এবং ইসরায়েলরাজ হোশেয়র রাজত্বের সপ্তম বছরে আসিরিয়ারাজ শালমানেসের শমরিয়া আক্রমণ করে অবরোধ করেন। 10তিন বছর অবরোধের পর শমরিয়ার পতন হয় হিষ্কিয়ের রাজত্বের ষষ্ঠ বছর এবং হোশেয়র রাজত্বের নবম বছরে এই ঘটনা ঘটে। 11আসিরিয়া সম্রাট ইসরায়েলীদের বন্দী করে আসিরিয়ায় নিয়ে যান এবং তাদের কিছু লোককে হালা নগরে, কিছু লোককে গোশন প্রদেশের হাবোর নদী তীরে এবং কিছু লোককে মিডিয়া প্রদেশের নগরগুলিতে বসতি করান। 12ইসরায়েলীরা তাদের আরাধ্য প্রভু পরমেশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল, তিনি তাদের সাথে সন্ধির যে চুক্তি করেছিলেন, তারা সেই চুক্তিভঙ্গ করেছিল এবং প্রভু তাঁর দাস মোশিকে যে বিধান দিয়েছিলেন, তা তারা লঙ্ঘন করেছিল। প্রভুর কথা পালন তো দূরের কথা, শোনেও নি। এই জন্যই শমরিয়ার পতন হয়েছিল।
জেরুশালেমের উপর আসিরিয়ার হুমকি
(২ বংশা 32:1-19; যিশা 36:1-22)
13রাজা হিষ্কিয়ের রাজত্বের চর্তুদশ বছরে আসিরিয়া সম্রাট সেনাখেরিব যিহুদীয়ার প্রাচীর ঘেরা সুরক্ষিত শহরগুলি আক্রমণ করে দখল করেন। 14রাজা হিষ্কিয় লাখীশে সেনাখেরিবের কাছে দূত পাঠিয়ে নিবেদন করলেনঃ আমি অন্যায় করেছি। দয়া করে আক্রমণ থামান। আপনার সমস্ত দাবি আমি পূরণ করব। তার উত্তরে সম্রাট তিনশো তালন্ত রূপো#18:14 দশ হাজার কিলোগ্রাম রূপো এবং ত্রিশ তালন্ত সোনা#18:14 এক হাজার কিলোগ্রাম সোনা হিষ্কিয়ের কাছে দাবী করলেন। 15হিষ্কিয় প্রভুর মন্দির ও রাজপ্রাসাদের কোষাগারের সমস্ত রূপো সম্রাটের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।#যাত্রা 25:22 16হিষ্কিয় মন্দিরের দরজায় লাগানো সোনার পাত এবং দরজার চৌকাঠগুলি তিনি নিজে যে সোনা দিয়ে মুড়েছিলেন, সেই সব সোনা তুলে সম্রাটকে দিয়েছিলেন। 17আসিরিয়া সম্রাট জেরুশালেমে রাজা হিষ্কিয়কে আক্রমণের জন্য লাখীশ থেকে তিনজন সেনাপতি—টাটান, রবসারিস ও রবশাখির নেতৃত্বে বিরাট এক সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। জেরুশালেমে এসে তাঁরা উপরের জলাশয়ের কাছে ধোপাখানার মাঠের পথ আগলে ঘাঁটি করলেন। 18তাঁরা রাজা হিলকিয়ের পুত্র রাজপ্রাসাদের অধ্যক্ষ ইলিয়াকিম, রাজসভার সচিব শেবনা এবং আসফের পুত্র লিপিকার যোয়াহ্ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। 19রবশাখি তাঁদের বললেন, হিষ্কিয়ের কাছে আমাদের মহান সম্রাট জানতে চান যে, তিনি এত আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে পেয়েছেন? 20তিনি বলেন, রণকৌশল ও বাহুবল তাঁর আছে। কিন্তু ওসব ভাঁওতা। তিনি কার ভরসায় আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন? 21তিনি ভেবেছেন, মিশর তাঁকে সাহায্য করবে। কিন্তু সে তো একটা ভাঙ্গা লাঠি। তার উপর যে ভর দেবে, তারই হাতে খোঁচা বিঁধবে। মিশররাজ ফারাও-এর উপরে যে নির্ভর করবে তারও ঐ দশাই ঘটবে।
22আসিরীয় সেনাপতি বলে চললেন, অথবা তিনি যদি বলেন যে, তিনি তাঁদের প্রভু পরমেশ্বরের উপরে নির্ভর করেন, তাহলে বলব, রাজা হিষ্কিয় তো নিজেই সেই প্রভুরই পীঠস্থান ও বেদীগুলি ধ্বংস করেছেন এবং ইহুদীরা ও জেরুশালেমের লোকদের একমাত্র জেরুশালেমের মন্দিরে উপাসনা করতে আদেশ দিয়েছেন। 23আসুন, আমার মনিব আসিরিয়ার সম্রাটের নামে বাজী ধরুন! আমি আপনাদের দুহাজার ঘোড়া দিচ্ছি, হিম্মত থাকে তো ঐ ঘোড়াগুলোর উপর সওয়ার হওয়ার জন্য লোক দিন। 24আমি বলছি, মিশর রথ ও অশ্বরোহী সৈন্য দিলেও আপনারা অত্যন্ত সাধারণ একজন আসিরীয় সেনানায়কের সামনে দাঁড়াতে পারবেন না। 25আপনারা কী ভেবেছেন, প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ ছাড়াই এ দেশ, আমি আক্রমণ করে ধ্বংস করতে এসেছি? প্রভু পরমেশ্বর স্বয়ং আমাকে এ দেশ আক্রমণ করে ধ্বংস করতে বলেছেন।
26তখন শেবনা ও যোয়াহ্ এবং হিলকিয়ের পুত্র ইলিয়াকিম এবং রবশাখিকে বললেন, দয়া করে অরামীয় ভাষায় আমাদের সঙ্গে কথা বলুন। এ ভাষা আমরা বুঝি। কিন্তু হিব্রু ভাষায় বলবেন না, কারণ প্রাচীরের উপরে দাঁড়িয়ে সকলে শুনছে।
27সেনাপতি বললেন, আপনারা কি ভেবেছেন যে শুধু রাজা ও আপনাদের সঙ্গেই কথা বলার জন্য সম্রাট আমাদের পাঠিয়েছেন? যারা প্রাচীরের উপরে বসে আছে তাদের সঙ্গেও আমি কথা বলব। আপনাদের মত এদের কপালেও একই দুর্ভোগ রয়েছে—এদেরও মল-মূত্র খেতে হবে।
28তারপর সেই সেনাপতি উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে হিব্রু ভাষায় বলতে লাগলেন, আসিরিয়ার মহান সম্রাট তোমাদের কি বলেছেন, শোন! 29তিনি বলেছেন, হিষ্কিয়ের কথায় তোমরা প্রতারিত হয়ো না। কারণ তিনি তোমাদের রক্ষা করতে পারবেন না। 30তাঁর কথায় বিশ্বাস করে তোমরা প্রভু পরমেশ্বরের উপর নির্ভর করো না, মনে করো না যে তিনি তোমাদের রক্ষা করবেন এবং আসিরিয়ার সম্রাটের হাত থেকে এই নগরকে বাঁচাবেন। 31-32হিষ্কিয়ের কথা তোমরা শুনো না। কারণ আসরীয় সম্রাট বলেছেন, তোমরা বেরিয়ে এস! আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর। তাহলে যতদিন না আমি এসে তোমাদের এই দেশের মতই আর একটি দেশে তোমাদের নিয়ে যাই, যে দেশ শস্য ও সুরার দেশ, রুটি ও দ্রাক্ষা ফলের দেশ, মধু ও জলপাই বনের দেশ, ততদিন তোমরা নিজেদের আঙুর ক্ষেতের আঙুর ও ডুমুর গাছের ডুমুর ভোগ করতে পারবে। নিজেদের কুয়োর জলও খেকে পারবে। আমার আদেশ যদি পালন কর, তাহলে তোমরা বাঁচবে, মরবে না। হিষ্কিয়ের কথায় ভুলে তোমরা কখনও বিশ্বাস করো না যে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের রক্ষা করবেন। 33কোন জাতির উপাস্য দেবতা কি কখনও আসিরীয় সম্রাটের হাত থেকে তাদের দেশ রক্ষা করতে পেরেছে? 34হমাৎ ও অর্পাদের দেবতারা এখন কোথায়? সেফারভায়িম,হেনা ও ইব্বহ্র দেবতারাই বা কোথায়? আমার হাত থেকে তারা কি শমরিয়াকে রক্ষা করতে পেরেছে? 35এইসব দেবতাদের মধ্যে কেউ কি আমার হাত থেকে তাদের দেশ রক্ষা করতে পেরেছে? তাহলে তোমরা কী করে ভাবছ যে প্রভু পরমেশ্বর জেরুশালেম রক্ষা করতে পারবেন?
36রাজা হিষ্কিয়ের পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী লোকেরা চুপ করে রইল। একটা কথাও বলল না। 37তখন ইলিয়াকিম, শেবনা এবং যোয়াহ্ দুঃখে নিজেদের পরণের পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন এবং রাজার কাছে গিয়ে আসিরীয় সেনাপতিদের এইসব কথা জানালেন।
Zur Zeit ausgewählt:
২ রাজাবলি 18: BENGALCL-BSI
Markierung
Teilen
Kopieren
Möchtest du deine gespeicherten Markierungen auf allen deinen Geräten sehen? Erstelle ein kostenloses Konto oder melde dich an.
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L.
Copyright © 2016 by The Bible Society of India
Used by permission. All rights reserved worldwide.