YouVersion Logo
Search Icon

লূকলিখিত সুসমাচার 7

7
একজন দাসকে যীশু সুস্থ করলেন
(মথি 8:5-13; যোহন 4:43-54)
1যীশু লোকদের যা বলতে চেয়েছিলেন তা বলা শেষ করে কফরনাহূম শহরে গেলেন। 2সেখানে একজন রোমীয় শতপতির এক ক্রীতদাস গুরুতর অসুখে মরনাপন্ন হয়েছিল। এই ক্রীতদাসটি শতপতির অতি প্রিয় ছিল। 3শতপতি যখন যীশুর কথা শুনতে পেলেন তখন ইহুদীদের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে যীশুর কাছে বলে পাঠালেন, যেন যীশু এসে তাঁর দাসের জীবন রক্ষা করেন। 4তাঁরা যীশুর কাছে এসে তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বললেন, “যাঁর জন্য আপনাকে এই কাজ করতে বলছি, তিনি একজন যোগ্য লোক। 5কারণ তিনি আমাদের লোকদের ভালবাসেন, আর তিনি আমাদের জন্য একটা সমাজ-গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন।”
6তখন যীশু তাদের সঙ্গে গেলেন। তিনি যখন সেই বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন তখন সেই শতপতি তাঁর বন্ধুদের দিয়ে বলে পাঠালেন, “প্রভু আপনি আর কষ্ট করবেন না, কারণ আপনি যে আমার বাড়িতে আসেন তার যোগ্য আমি নই। 7এই কারণেই আমি নিজেকে আপনার কাছে যাবার উপযুক্ত মনে করি না। আপনি কেবল মুখে বলুন তাতেই আমার ঐ দাস ভাল হয়ে যাবে। 8কারণ আমিও একজনের অধীনে কাজ করি, আর আমার অধীনেও সৈনিকরা কাজ করে। আমি যদি কাউকে বলি ‘যাও’ তখন সে যায়, আবার কাউকে যদি বলি ‘এস’ তবে সে আসে। আর আমি যখন একজনকে বলি, ‘এটা কর,’ তখন সে তা করে।”
9এই কথা শুনে যীশু আশ্চর্য হলেন। যে সব লোক ভীড় করে তাঁর পিছনে পিছনে আসছিল, তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের বলছি, এমন কি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস আমি কখনও দেখিনি।”
10সেনাপতি যাদের পাঠিয়েছিলেন, তারা বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখল যে সেই চাকর ভাল হয়ে গেছে।
যীশু একজনের জীবন দান করলেন
11এর অল্প দিন পরেই যীশু নায়িন্ নামে একটি নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা এবং আরও অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 12তিনি যখন সেই নগরের ফটকের কাছাকাছি এসেছেন, তখন একজন মৃত লোককে বয়ে নিয়ে যাওযা হচ্ছিল। সেই মৃত লোকটি ছিল তার বিধবা মায়ের একমাত্র পুত্র। সেই নগরের অনেক লোক সেই বিধবার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 13সেই বিধবাকে দেখে তার জন্য প্রভুর খুবইদয়া হল। তিনি তাকে বললেন, “তুমি কেঁদো না।” 14তারপর তিনি কাছে এসে শবের খাট ছুঁলেন, তখন যারা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে পড়ল। এমন সময় যীশু বললেন, “যুবক, আমি তোমায় বলছি তুমি ওঠো।” 15তখন সেই লোকটি উঠে বসল, আর কথা বলতে শুরু করল। যীশু তখন তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
16এই দেখে সকলের মন ভয় ও ভক্তিতে পূর্ণ হল। তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলতে লাগল, “আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদীর আবির্ভাব হয়েছে।” তারা আরও বলতে লাগল, “ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাহায্য করতে এসেছেন।”
17যীশুর বিষয়ে এইসব কথা যিহূদিয়া ও তার আশপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল।
যোহনের জিজ্ঞাসা
(মথি 11:2-19)
18বাপ্তিস্মদাতা যোহনের অনুগামীরা এইসব ঘটনার কথা যোহনকে জানাল। তখন যোহন তার দুজন অনুগামীকে ডেকে 19প্রভুর কাছে জিজ্ঞেস করে পাঠালেন যে, “যাঁর আগমণের কথা আছে আপনিই কি সেই, না আমরা অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করব?”
20সেই লোকেরা যীশুর কাছে এসে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞেস করতে পাঠিয়েছেন। ‘যাঁর আসবার কথা আপনিই কি সেই ব্যক্তি, না আমরা অন্য কারো অপেক্ষায় থাকব?’”
21সেই সময় যীশু অনেক লোককে বিভিন্ন রোগ ও ব্যাধি থেকে সুস্থ করছিলেন, অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকদের ভাল করছিলেন, আর অনেক অন্ধ লোককে দৃষ্টি শক্তি দান করছিলেন। 22তখন তিনি তাদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, “তোমরা যা দেখলে ও শুনলে তা গিয়ে যোহনকে বল। অন্ধরা দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, কুষ্ঠ রোগীরা সুস্থ হচ্ছে, বধিররা শুনছে, মরা মানুষ বেঁচে উঠছে; আর দরিদ্ররা সুসমাচার শুনতে পাচ্ছে। 23ধন্য সেই লোক, যে আমাকে গ্রহণ করার জন্য মনে কোন দ্বিধা বোধ করে না।”
24যোহনের কাছ থেকে যারা এসেছিল তারা চলে গেলে পর যীশু সমবেত সেই লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে বললেন, “তোমরা প্রান্তরের মধ্যে কি দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে একটি বেত গাছ দুলছে তাই? 25তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন লোক বেশ জমকালো পোশাক পরা? না। যারা দামী জামা কাপড় পরে এবং বিলাসে জীবন কাটায় তারা তো প্রাসাদে থাকে। 26তবে তোমরা কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যাকে দেখেছ তিনি একজন ভাববাদীর থেকেও মহান। 27ইনি সেই লোক যার বিষয়ে লেখা হয়েছে:
‘দেখ, আমি তোমার আগে আগে আমার এক সহায়ককে পাঠাচ্ছি।
সে তোমার আগে গিয়ে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।’#মালাখি 3:1
28আমি তোমাদের বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকল মানুষের মধ্যে যোহনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই, তবু ঈশ্বরের রাজ্যে ক্ষুদ্রতম ব্যক্তিও যোহনের চেয়ে মহান।”
29(যারা যীশুর প্রচার শুনেছিল, তাদের মধ্যে পাপীষ্ঠরা ও কর আদায়কারীরাও যোহনের বাপ্তিস্ম নিয়ে স্বীকার করল যে ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ। 30কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিতে অস্বীকার করে তাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করল।)
31“তাহলে আমি কিসের সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব? এরা কেমন ধরণের লোক? 32এরা ছোট ছেলেদের মতো, যারা হাটে বসে একে অপরকে বলে,
‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম,
কিন্তু তোমরা নাচলে না।
আমরা তোমাদের জন্য শোকগাথা গাইলাম,
কিন্তু তোমরা কাঁদলে না।’
33কারণ বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসেছেন, তিনি রুটি খান না আর দ্রাক্ষারসও পান করেন না, আর তোমরা বল, ‘ওকে ভূতে পেয়েছে।’ 34মানবপুত্র এসে পানাহার করেন; আর তোমরা বল, ‘দেখ! ও পেটুক, মদ্যপায়ী, আবার পাপী ও কর আদায়কারীদের বন্ধু।’ 35প্রজা তার কাজের দ্বারাই প্রমাণ করে যে তা নির্দোষ।”
শিমোন ফরীশী
36একদিন একজন ফরীশী তার বাড়িতে যীশুকে নিমন্ত্রণ করল। তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে সেখানে খাবার আসন নিলেন।
37সেই নগরে একজন দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিল। ফরীশীর বাড়িতে যীশু খেতে এসেছেন জানতে পেরে সে একটা শ্বেত পাথরের শিশিতে করে বহুমূল্য আতর নিয়ে এল। 38সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে নতজানু হয়ে কেঁদে কেঁদে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল, আর তাঁর পায়ে চুমু দিয়ে সেই আতর তাঁর পায়ে ঢেলে দিল।
39যে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিল, এই দেখে সে মনে মনে বলল, “এই লোকটা যদি ভাববাদী হয় তবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারত, যে তার পা ছুঁচ্ছে সে কে এবং কি ধরণের স্ত্রীলোক, এবং এও জানতে পারত যে স্ত্রীলোকটি পাপী।”
40এর জবাবে যীশু তাকে বললেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।”
শিমোন বলল, “বেশ তো গুরু, বলুন।”
41যীশু বললেন, “কোন এক মহাজনের কাছে দুজন লোক টাকা ধারত। একজন পাঁচশো রূপোর মুদ্রা আর একজন পঞ্চাশ রূপোর মুদ্রা। 42কিন্তু তারা কেউই ঋণ শোধ করতে না পারাতে তিনি দয়া করে উভয়ের ঋণই মকুব করে দিলেন। এখন এদের মধ্যে কে তাঁকে বেশী ভালবাসবে?”
43শিমোন বলল, “আমি মনে করি যার বেশী ঋণ মকুব করা হল সে-ই।”
যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।” 44এরপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে দেখছ? আমি তোমার বাড়িতে এলাম আর তুমি আমায় পা ধোবার জল পর্যন্ত দিলে না। কিন্তু ও চোখের জলে আমার পা ধুইয়ে দিল আর নিজের চুল দিয়ে তা মুছিয়ে দিল। 45স্বাগত জানাবার প্রথা অনুসারে তুমি আমায় চুমু দিলে না; কিন্তু আমি আসার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিয়ে চলেছে। 46তুমি আমার মাথায় তেল দিয়ে অভিষেক করলে না; কিন্তু সে আমার পায়ে সুগন্ধি আতর ঢেলে তা অভিষিক্ত করল। 47এতেই বোঝা যায় যে সে বেশী ভালবাসা দেখাচ্ছে, সেইজন্যই আমি বলছি, এর পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে; কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্প ভালবাসে।”
48এরপর যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, “তোমার পাপের ক্ষমা হল।”
49যারা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিল, তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “ইনি কে যে পাপ ক্ষমা করেন?”
50কিন্তু যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমায় মুক্ত করেছে, তোমার শান্তি হোক্।”

Highlight

Share

Copy

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in