YouVersion Logo
Search Icon

২ বংশাবলি 32

32
জেরুশালেমের প্রতি আসিরিয়ার হুমকি
(২ রাজা 18:13-37; 19:14-19,35-37; যিশা 36:1-22; 37:8-38)
1প্রভু পরমেশ্বরের কাছে রাজা হিষ্কিয় অনুগত ও বিশ্বস্তভাবে এই সমস্ত কাজ করার পর আসিরিয়ার সম্রাট সেনাখেরিব যিহুদীয়া আক্রমণ করলেন। প্রাচীরঘেরা সুরক্ষিত নগরগুলি ঘেরাও করলেন এবং সৈন্যদের প্রাচীর ভেঙ্গে নগরে প্রবেশ করতে আদেশ দিলেন। 2রাজা হিষ্কিয় যখন দেখলেন, সেনাখেরিব জেরুশালেম আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছেন তখন 3-4তিনি এবং তাঁর পারিষদেরা জেরুশালেমের বাইরে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া স্থির করলেন যাতে আসিরীয় সৈন্যরা জেরুশালেমের কাছে এসে জল না পায়। রাজকর্মচারীরা নগর প্রাচীরের বাইরে বহু লোক নিয়ে গিয়ে জলের সমস্ত প্রস্রবণ বন্ধ করে দিল যাতে সেখান থেকে জল প্রবাহিত না হয়। 5রাজা নগর-প্রাকারের ভাঙ্গা জায়গাগুলি মেরামত করিয়ে প্রাচীরকে আরও দৃঢ়, মজবুত ও সুরক্ষিত করলেন, প্রাচীরের উপরে আরও মিনার তৈরী করালেন এবং বাইরের দিকে আর একটি দেওয়াল নির্মাণ করলেন। প্রাচীন জেরুশালেমের পূর্ব দিকের দুর্গগুলিকে সংস্কার করিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করলেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রচুর ঢাল বর্শা তৈরী করালেন। 6নগরের সমস্ত লোককে তিনি সেনাপতিদের অধীনে নগরতোরণের কাছে উন্মুক্ত চত্বরে একত্র হতে আদেশ দিলেন। রাজা তাদের বললেন, 7তোমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হও, আত্মবিশ্বাস রাখ। আসিরীয় সম্রাট বা তাঁর সৈন্যদের দেখে ভীত হয়ো না। তাঁর চেয়ে আমরা অনেক বেশি শক্তিমান। 8তাঁর শক্তি মানুষের বাহুবল কিন্তু আমাদের সাহায্যের জন্য এবং আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য আছেন আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর স্বয়ং প্রভু পরমেশ্বর। রাজার এই কথা শুনে প্রজাবৃন্দ অত্যন্ত উৎসাহিত হল।
9কিছুদিন পরে সৈন্যদলসহ সম্রাট সেনাখেরিব লাখীশ অবরোধ করে থাকাকালে রাজা হিষ্কিয় ও জেরুশালেমে উপস্থিত যিহুদীয়ার প্রজাদের কাছে এই সংবাদ পাঠালেনঃ 10আমি, সেনাখেরিব, আসিরিয়ার সম্রাট তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি, তোমরা কোন ভরসায় জেরুশালেমের অবরুদ্ধ হয়ে বাস করছ? 11হিষ্কিয় তোমাদের বলেছেন যে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের আমাদের হাত থেকে রক্ষা করবেন। কিন্তু হিষ্কিয় তোমাদের প্রতারণা করছেন এবং ক্ষুধা-তৃষ্ণায় তোমাদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেবেন। 12তিনিই হলেন সেই ব্যক্তি যিনি প্রভু পরমেশ্বরের সমস্ত বেদী ভেঙ্গে ফেলেছেন এবং যিহুদীয়া ও জেরুশালেমের লোকদের একটিমাত্র বেদীর কাছে উপাসনা ও ধূপ নিবেদন করতে বলেছেন। 13তোমরা কি জান না, আমার পূর্বপুরুষেরা ও আমি অন্যান্য জাতির লোকদের কি দশা করেছি? তাদের দেবতারা কি আসিরিয়ার সম্রাটের হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছে? 14অন্যান্য দেশের দেবতারা তাদের দেশকে আমাদের হাত থেকে রক্ষা করেছে এমন কথা কি কখনও শুনেছ? তাহলে তোমাদের দেবতা তোমাদের রক্ষা করবে, এমন কথা ভাবছ কি করে? 15সুতরাং এভাবে হিষ্কিয়কে তোমাদের প্রতারিত করে ভুল পথে নিয়ে যেতে দিও না। বিশ্বাস করো না তাকে! কোন জাতির আরাধ্য কোন দেবতা এ পর্যন্ত কোন আসিরীয় সম্রাটের হাত থেকে তার ভক্তদের রক্ষা করতে পারে নি। অতএব তোমাদের আরাধ্য এই দেবতাও তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না।
16আসিরীয় রাজকর্মচারীরা প্রভু পরমেশ্বর ও তাঁর পরম ভক্ত হিষ্কিয়ের সম্বন্ধে এর চেয়েও আরও হীন কথা বলে গেল। 17সম্রাটের লেখা চিঠিতে ইসরায়েলের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের অপমানজনক কথা লেখা ছিল। তাতে লেখা ছিল: অন্যান জাতির দেবতারা আমার হাত থেকে তাদের ভক্তদের রক্ষা করতে পারে নি, হিষ্কিয়ের আরাধ্য ঈশ্বরও আমার হাত থেকে তার প্রজাদের রক্ষা করতে পারবে না। 18নগরের প্রচীরের উপরে জেরুশালেমের যে লোকেরা বসে ছিল তাদের ভয় দেখিয়ে মনোবল ভেঙ্গে দেবার জন্য আসিরীয় রাজকর্মচারীরা চীৎকার করে হিব্রু ভাষায় এই সমস্ত কথা বলল যাতে সহজে নগর অধিকার করা যায়। 19মানুষের হাতে গড়া অন্যান্য জাতির দেব প্রতিমাগুলি সম্পর্কে যে ভাবে তারা বলেছিল, ঠিক সেইভাবে জেরুশালেমের ঈশ্বর সম্বন্ধেও নানা কথা বলল।
20তখন রাজা হিষ্কিয় ও আমোসের পুত্র যিশাইয় ঈশ্বরের কাছে সাহায্য ভিক্ষা করে চোখের জলে প্রার্থনা করতে লাগলেন। 21প্রভু পরমেশ্বর একজন স্বর্গদূত পাঠালেন। তিনি আসিরিয়ার সৈন্যদের ও সেনাপতিদের বধ করলেন। ফলে আসিরিয়ার সম্রাট হতমান হয়ে আসিরিয়ায় ফিরে গেলেন। একদিন যখন তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতার মন্দিরে ছিলেন, সেই সময় তাঁর পুত্রদের মধ্যে একজন তাঁকে হত্যা করে।
22এইভাবে প্রভু পরমেশ্বর রাজা হিষ্কিয় ও জেরুশালেমের প্রজাদের সম্রাট সেনাখেরিব ও তাদের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি তাঁর প্রজাদের প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে শান্তি ও সদ্ভাবে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। 23বহুলোক জেরুশালেমে প্রভু পরমেশ্বরের কাছে নৈবেদ্য এবং রাজা হিষ্কিয়ের কাছে উপহার নিয়ে জেরুশালেমে এসেছিল। তাই তখন থেকে সমস্ত জাতির লোকের কাছে রাজা হিষ্কিয় সম্মান ও মর্যাদার আসন লাভ করেন।
হিষ্কিয়ের অহঙ্কার ও সাঙ্ঘাতিক পীড়া
24এই সময় রাজা হিষ্কিয় ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন তিনি মৃতপ্রায়। তিনি প্রভু পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং প্রভু তাঁকে একটি চিহ্ন দিয়ে জানালেন যে তিনি সুস্থতা লাভ করবেন। 25কিন্তু হিষ্কিয়ের মনে এত অহঙ্কার জন্মাল যে প্রভু পরমেশ্বর তাঁর জন্য যে সমস্ত কাজ করেছিলেন তার প্রতিদানে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করলেন না। ফলে যিহুদীয়া ও জেরুশালেমের উপরে ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে এল। 26শেষ পর্যন্ত হিষ্কিয় এবং জেরুশালেমের প্রজারা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের অবনত করলেন। তাই ঈশ্বর রাজা হিষ্কিয়ের মৃত্যু পর্যন্ত প্রজাদের দণ্ডদান করেন নি।
হিষ্কিয়ের ধন সম্পদ ও ঐশ্বর্য
27রাজা হিষ্কিয় অত্যন্ত ধনবান হয়েছিলেন তাই লোকে তাঁকে সম্ভ্রম ও সম্মান করত। সোনা, রূপো, বহুমূল্য মণিমাণিক্য, মশলা, ঢাল এবং আরও নানান দামী জিনিষপত্র মজুত করে রাখার জন্য তিনি অনেক কোষাগার নির্মাণ করিয়েছিলেন। 28উপরন্তু তিনি খাদ্যশস্য, সুরা এবং জলপাই তেল রাখার জন্য গোলাঘর ও তাঁর গরুর পাল রাখার জন্য গোয়াল ঘর এবং মেষপাল রাখার জন্য বাথান নির্মাণ করিয়েছিলেন। 29এ সমস্ত ছাড়াও ঈশ্বর তাঁকে মেষপাল ও গরুর পাল দিয়েছিলেন এবং আরও অনেক সম্পদ দান করছিলেন, যার দ্বারা তিনি অনেক নগর নির্মাণ করেছিলেন। 30রাজা হিষ্কিয়ই গিহোন প্রস্রবণের বাইরের দিকের মুখ বন্ধ করে দিয়ে তার জলাধারাকে জেরুশালেমের প্রাচীরের এপারে ভিতরের দিকে সুড়ঙ্গ কাটিয়ে প্রবাহিত করিয়েছিলেন। হিষ্কিয় প্রতিটি কাজেই সফল হয়েছিলেন। 31এমন কি ব্যাবিলনের রাজদূতেরা যখন দেশে অদ্ভুত ঘটনার কথা জানবার জন্য এসেছিল, ঈশ্বর তখন তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়েছিলেন।
হিষ্কিয়ের রাজত্বের অন্তিমকাল
(২ রাজা 20:20-21)
32রাজা হিষ্কিয় যা খিছু কাজ করেছিলেন সেই সমস্ত কীর্তিকাহিনী এবং প্রভু পরমেশ্বরের প্রতি তাঁর অসীম শ্রদ্ধা ও ভক্তির কথা আমোসের পুত্র নবী যিশাইয়-এর দর্শন পুস্তকে এবং যিহুদীয়া ও ইসরায়েলের রাজবংশের ইতিহাসে লেখা আছে। 33মৃত্যুর পর হিষ্কিয়র শবদেহ রাজকীয় সমাধিগুহার উপরের দিকে সমাহিত করা হল। সমগ্র যিহুদীয়া ও জেরুশালেমবাসী তাঁর মৃত্যুতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাল। তাঁর পুত্র মনঃশি তাঁর পরে রাজা হলেন।

Highlight

Share

Copy

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in