গীতসংহিতা । 18
18
প্রধান বাদ্যকরের জন্য। সদাপ্রভুর দাস দায়ূদের; যে দিন সদাপ্রভু সমস্ত শত্রুর হস্ত হইতে, এবং শৌলের হস্ত হইতে দায়ূদকে উদ্ধার করিলেন, সেই দিন তিনি সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই গীতের কথা নিবেদন করিলেন। তিনি কহিলেন,
1হে সদাপ্রভু! মম বল! আমি তোমাতে অনুরক্ত।
2সদাপ্রভু মম শৈল, মম দুর্গ, ও মম রক্ষাকর্ত্তা,
মম ঈশ্বর, মম দৃঢ় শৈল, আমি তাঁহার শরণাগত;
মম ঢাল, মম ত্রাণশৃঙ্গ, মম উচ্চদুর্গ।
3আমি কীর্ত্তনীয় সদাপ্রভুকে ডাকিব,
এইরূপে আমার শত্রুগণ হইতে ত্রাণ পাইব।
4আমি মৃত্যুর রজ্জুতে পরিবেষ্টিত ছিলাম,
পাষণ্ডতার বন্যাতে আশঙ্কিত ছিলাম।
5আমি পাতালের রজ্জুতে বেষ্টিত ছিলাম,
মৃত্যুর পাশে জড়িত ছিলাম।
6সঙ্গটে আমি সদাপ্রভুকে ডাকিলাম,
আমার ঈশ্বরের উদ্দেশে আর্ত্তনাদ করিলাম;
তিনি নিজ মন্দির হইতে আমার রব শুনিলেন,
তাঁহার সম্মুখে আমার আর্ত্তনাদ তাঁহার কর্ণে প্রবেশ করিল।
7তখন পৃথিবী টলিল, কম্পিত হইল,
পর্ব্বতরাজির মূল সকল বিচলিত হইল,
ও টলিল, কারণ তিনি জ্বলিয়া উঠিলেন।
8তাঁহার নাসারন্ধ্র হইতে ধূম উদগত হইল,
তাঁহার মুখনির্গত অগ্নি গ্রাস করিল;
তদ্দ্বারা অঙ্গার সকল প্রজ্বলিত হইল।
9তিনি গগনকে নোয়াইয়া নামিলেন,
অন্ধকার তাঁহার পদতলে ছিল।
10তিনি করূব আরোহণে উড্ডীন হইলেন,
বায়ু-পক্ষভরে উড়িয়া আসিলেন।
11তিনি অন্ধকারকে আপন অন্তরাল, আপনার চতুর্দ্দিক্স্থ তাম্বু করিলেন;
জলের তিমির গণনের ঘন মেঘমালা।
12তাঁহার সম্মুখবর্ত্তী তেজ হইতে তাঁহার মেঘমালা চলিয়া গেল,
শিলাবৃষ্টি ও প্রজ্বলিত অঙ্গার।
13আর সদাপ্রভু আকাশে বজ্রনাদ করিলেন,
পরাৎপর আপন রব শুনাইলেন;
শিলাবৃষ্টি ও প্রজ্বলিত অঙ্গার।
14তিনি আপন বাণ ছাড়িলেন, তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিলেন;
বহু বজ্র ছাড়িয়া তাহাদিগকে উদ্বিগ্ন করিলেন।
15তখন জলরাশির প্রণালী সকল প্রকাশ পাইল,
ভূমণ্ডলের মূল সকল অনাবৃত হইল,
তোমার তর্জ্জনে, হে সদাপ্রভু,
তোমার নাসিকার প্রশ্বাসবায়ুতে।
16তিনি ঊর্দ্ধ হইতে [হস্ত] বিস্তার করিলেন, আমাকে ধরিলেন,
মহাজলরাশি হইতে আমাকে টানিয়া তুলিলেন;
17তিনি আমাকে উদ্ধার করিলেন আমার বলবান শত্রু হইতে,
আমার বিদ্বেষিগণ হইতে, কেননা তাহারা আমা অপেক্ষা শক্তিমান ছিল।
18আমার বিপদের দিনে তাহারা আমার কাছে আসিল,
কিন্তু সদাপ্রভু আমার অবলম্বন হইলেন।
19তিনি আমাকে বাহিরে প্রশস্ত স্থানে আনিলেন,
আমাকে উদ্ধার করিলেন, কেননা তিনি আমাতে সন্তুষ্ট ছিলেন।
20সদাপ্রভু আমার ধার্ম্মিকতানুযায়ী পুরস্কার দিলেন,
আমার হস্তের শুচিতানুযায়ী ফল দিলেন।
21কেননা আমি সদাপ্রভুর পথে চলিয়াছি,
দুষ্টতাপূর্ব্বক আমার ঈশ্বরকে ছাড়ি নাই।
22কারণ তাঁহার সমস্ত শাসন আমার সম্মুখে ছিল,
আমি তাঁহার বিধি আমা হইতে দূর করি নাই।
23আর আমি তাঁহার উদ্দেশে সিদ্ধ ছিলাম,
নিজ অপরাধ হইতে আপনাকে রক্ষা করিতাম।
24তাই সদাপ্রভু আমার ধার্ম্মিকতা অনুসারে ফল দিলেন,
তাঁহার সাক্ষাতে আমার হস্তের শুচিতানুসারে দিলেন।
25তুমি দয়াবানের সহিত সদয় ব্যবহার করিবে,
সিদ্ধের সহিত সিদ্ধ ব্যবহার করিবে।
26তুমি শুচির সহিত শুচি ব্যবহার করিবে,
কুটিলের সহিত চতুরতা ব্যবহার করিবে।
27কেননা তুমি দুঃখীদিগকে নিস্তার করিবে,
কিন্তু গর্ব্বিত নয়ন অবনত করিবে।
28তুমিই আমার প্রদীপ উজ্জ্বল করিয়া থাক;
সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার অন্ধকার আলোকময় করেন।
29কেননা তোমার দ্বারা আমি সৈন্যদলের বিরুদ্ধে দৌড়ি;
আমার ঈশ্বরের দ্বারা প্রাচীর উল্লঙ্ঘন করি।
30তিনিই ঈশ্বর, তাঁহার পথ সিদ্ধ;
সদাপ্রভুর বাক্য পরীক্ষাসিদ্ধ;
তিনি নিজ শরণাগত সকলের ঢাল।
31কারণ সদাপ্রভু ব্যতীত আর ঈশ্বর কে আছে?
আমাদের ঈশ্বর ব্যতীত আর শৈল কে আছে?
32ঈশ্বর বল দিয়া আমার কটিবন্ধন করিয়াছেন।
তিনি আমার পথ সিদ্ধ করিয়াছেন।
33তিনি আমার চরণ হরিণীর চরণবৎ করেন,
আমার উচ্চস্থলীতে আমাকে সংস্থাপন করেন।
34তিনি আমার হস্তকে যুদ্ধ করিতে শিক্ষা দেন,
তাই আমার বাহু তাম্রময় ধনুকে চাড়া দেয়।
35তুমি আমাকে নিজ পরিত্রাণ-ঢাল দিয়াছ;
তোমার দক্ষিণ হস্ত আমাকে ধারণ করিয়াছে,
তোমার কোমলতা আমাকে মহান্ করিয়াছে।
36তুমি আমার নীচে পাদসঞ্চারের স্থান প্রশস্ত করিয়াছ,
আর আমার গুল্ফ বিচলিত হয় নাই।
37আমি শত্রুগণের পশ্চাতে দৌড়িব,
তাহাদিগকে ধরিব, সংহার না করিয়া ফিরিয়া আসিব না।
38আমি তাহাদিগকে চূর্ণ করিব, তাহারা আর উঠিতে পারিবে না,
তাহারা আমার পদতলে পতিত হইবে।
39কারণ তুমি যুদ্ধার্থে বল দিয়া আমার কটিবন্ধন করিয়াছ;
যাহারা আমার বিরুদ্ধে উঠিয়াছিল, তাহাদিগকে তুমি আমার অধীনে নত করিয়াছ।
40আমার শত্রুগণকে আমা হইতে ফিরাইয়া দিয়াছ,
আমি আপন বিদ্বেষীদিগকে সংহার করিয়াছি।
41তাহারা আর্ত্তনাদ করিল, কিন্তু ত্রাণকর্ত্তা কেহ নাই;
সদাপ্রভুকে [ডাকিল], কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন না।
42তখন আমি তাহাদিগকে বায়ুচালিত ধূলির ন্যায় চূর্ণ করিলাম;
পথের কর্দ্দমের ন্যায় ফেলিয়া দিলাম;
43তুমি আমাকে প্রজাদের দ্রোহ হইতে উদ্ধার করিয়াছ,
জাতিগণের মস্তকরূপে নিযুক্ত করিয়াছ;
আমার অপরিচিত জাতি আমার দাস হইবে।
44শ্রবণমাত্র তাহারা আমার আজ্ঞাকারী হইবে;
বিজাতি-সন্তানেরা আমার কর্ত্তৃত্ব স্বীকার করিবে।
45বিজাতি সন্তানেরা ম্লান হইবে,
স্বকম্পে স্ব স্ব গুপ্ত স্থান হইতে বাহিরে আসিবে।
46সদাপ্রভু জীবন্ত, আমার শৈল ধন্য হউন,
আমার ত্রাণের ঈশ্বর উন্নত হউন।
47সেই ঈশ্বর আমার পক্ষে প্রতিশোধ দেন,
জাতিগণকে আমার অধীনে দমন করেন।
48তিনি আমার শত্রুগণ হইতে আমাকে উদ্ধার করেন;
যাহারা আমার বিরুদ্ধে উঠে, তুমি তাহাদের উপরেও আমাকে উন্নত করিতেছ,
তুমি দুর্ব্বৃত্ত লোক হইতে আমাকে উদ্ধার করিতেছ।
49এই কারণ, হে সদাপ্রভু, আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার স্তব করিব,
তোমার নামের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিব।
50তিনি আপন রাজাকে মহাপরিত্রাণ দেন, আপন অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন,
যুগে যুগে দায়ূদের ও তাহার বংশের প্রতি দয়া করেন।
Currently Selected:
গীতসংহিতা । 18: BENGALI-BSI
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Bengali O.V. Bible, পবিএ বাইবেল O.V.
Copyright © 2016 by The Bible Society of India
Used by permission. All rights reserved worldwide.