পবিএ বাইবেল O.V.

এইভাবে বিশ্বসৃষ্টির কাজ সম্পূর্ণ হল । ঈশ্বর তাঁর আরব্ধ কর্ম সম্পূর্ণ করে সপ্তম দিবসে সকল কর্ম থেকে বিরত হয়ে বিশ্রাম নিলেন। সপ্তম দিবসকে ঈশ্বর বিশেষ দিনরূপে প্রতিষ্ঠা দান করলেন, কারণ ঐ দিন ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টির সকল কর্ম থেকে বিরত হয়ে বিশ্রাম গ্রহণ করেছিলেন। এই হল আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিকাহিনী ।

প্রভু পরমেশ্বর যখন আকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন তখন পৃথিবীতে কোন উদ্ভিদ ছিল না, প্রান্তরে তখনও উৎপন্ন হয়নি কোন তৃণলতা কারণ প্রভু পরমেশ্বর তখনও পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত করেননি এবং কৃষিকর্ম করার জন্য কোন মানুষও তখন ছিল না । ভূগর্ভ থেকে উৎসারিত জলধারায় সিঞ্চিত হত সমগ্র ধরাতল। প্রভু পরমেশ্বর তখন মাটি দিয়ে মানুষ গড়লেন এবং তার নাসিকায় আপন প্রশ্বাসে প্রাণবায়ু সঞ্চারিত করলেন । তখন মানুষ পরিণত হল এক সজীব সত্তায়।
তারপর প্রভু পরমেশ্বর পূর্বদিকে, এদনে এক উদ্যান রচনা করে সেখানে তাঁর সৃষ্ট মানুষকে রাখলেন । প্রভু পরমেশ্বর ধরাপৃষ্ঠে সর্বপ্রকার সুখাদ্য উৎপাদক সুদৃশ্য বৃক্ষরাজি উৎপন্ন করলেন । সেই উদ্যানের মাঝখানে সৃষ্টি করলেন জীবন বৃক্ষ এবং সৎ ও অসৎ জ্ঞানদায়ী বৃক্ষ। উদ্যানে জলসেচের জন্য এদন থেকে প্রবাহিত হল একটি নদী সেখান থেকে বেরিয়ে সেই নদী চারটি ধারায় ভাগ হয়ে গেল । প্রথম নদীটির নাম পীশোন, এটি সমগ্র হবীলা দেশ বেষ্টন করে প্রবাহিত । এখানে সোনা পাওয়া যায় । এই দেশের সোনা উৎকৃষ্ট এবং এখানে গুগগুল ও গোমেদ মণি পাওয়া যায় । দ্বিতীয় নদীর নাম গীহোন, এটি সমগ্র কুশ দেশ বেষ্টন করে প্রবাহিত। তৃতীয় নদীর নাম হিদ্দেকল, (টাইগ্রিস) এটি আসিরিয়া দেশের পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত। চতুর্থ নদীটির নাম ফরাৎ (ইউফ্রেটিস)।
প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে এদন উদ্যানে কৃষিকর্ম ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত করলেন। প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে নির্দেশ দিলেন, তুমি এই উদ্যানের যে কোন ফল খেতে পার কিন্তু সৎ এবং অসৎ জ্ঞানদায়ী যে বৃক্ষটি রয়েছে, তার ফল খেও না। যেদিন সেই বৃক্ষের ফল তুমি খাবে, নিশ্চিত জেন, সেই দিনই হবে তোমার মৃত্যু। তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব।
প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে ভূচর সকল পশু ও খেচর সকল পাখি সৃষ্টি করলেন এবং সেই মানুষটি তাদের কি নাম রাখবেন, তা জানার জন্য তাদের তাঁর কাছে নিয়ে এলেন। তিনি যে প্রাণীর যে নাম রাখলেন, তার সেই নামই থাকল।
তিনি প্রত্যেক গৃহপালিত পশু, পাখি ও বন্যপশুর নামকরণ করলেন কিন্তু মানুষের যোগ্য কোন সঙ্গিনী তাদের মধ্যে পাওয়া গেল না। তখন প্রভু পরমেশ্বর আদমকে ঘোর নিদ্রায় অভিভূত করলেন এবং নিদ্রিত অবস্থায় তাঁর পঞ্জর থেকে একখানি অস্থি খুলে নিয়ে মাংস দিয়ে সেই স্থান পূরণ করলেন। প্রভু পরমেশ্বর আদমের দেহ থেকে খুলে নেওয়া পঞ্জরাস্থি দ্বারা এক নারী সৃষ্টি করলেন এবং তাকে আদমের কাছে নিয়ে এলেন। আদম তখন বললেন,
এবার আমি পেলাম তাকে
যে আমার একান্ত আপন,
আমারই অস্থি থেকে যার উদ্ভব!
সম্ভূতা সে নরের সত্তা থেকে
নারী হবে তার নাম।
এই কারণেই মানুষ তার পিতামাতাকে পরিত্যাগ করে স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হয় এবং তারা দুজনে হয় একাঙ্গ।
আদম ও তাঁর স্ত্রী ছিলেন উলঙ্গ। কিন্তু তখন তাঁদের কোন লজ্জাবোধ ছিল না।

Sikiliza আদিপুস্তক 2