পবিএ বাইবেল O.V.

Bengali - Old Version BSI (NT) Drama

এরপর যীশু গালীল প্রদেশে পরিভ্রমণ করতে লাগলেন। ইহুদীরা যীশুকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিল, তাই তিনি যিহুদীয়ায় যেতে চান নি। ইহুদীদের কুটিরবাস পর্ব তখন আসন্ন, তাই তাঁর ভাইয়েরা যীশুকে বলল, এখান থেকে তুমি যিহুদীয়ায় চলে যাও। তাহলে তুমি যে সমস্ত অলৌকিক কাজ করছ, তোমার শিষ্যেরাও তা দেখতে পাবে। সাধারণের কাছে পরিচিত হতে হলে কেউ মানুষের অগোচরে কাজ করে না। তুমি যদি সত্যিই এ সব মহৎ কাজ করতে চাও তাহলে নিজেকে প্রকাশ কর সবার সামনে। (প্রকৃতপক্ষে যীশুর ভাইয়েরাও যীশুকে বিশ্বাস করত না।)
যীশু তাদের বললেন, আমার পক্ষে উপযুক্ত সময় এখনও আসেনি কিন্তু তোমাদের পক্ষে যে কোন সময়ই উপযুক্ত। জগত তোমাদের ঘৃণা করতে পারে না। কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে কারণ তার পথ যে মন্দ, সে কথা আমি প্রকাশ করে দিই। তোমরা যাও পর্বে, আমি যাব না। আমার উপযুক্ত সময় এখনও আসেনি। এই বলে যীশু গালীলে থেকে গেলেন।

যীশুর ভাইয়েরা উৎসবে চলে গেলে পর যীশুও সেখানে গেলেন-প্রকাশ্যে নয় গোপনে। পর্বের সময় ইহুদীরা যীশুকে খুঁজতে লাগল এবং জিজ্ঞাসা করতে লাগল, তিনি কোথায়?
তাঁকে নিয়ে জনতার মধ্যে কানাকানি চলতে লাগল। কেউ কেউ বলল, তিনি একজন সৎ লোক। অন্যেরা বলল, না, উনি লোকদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছেন। যাই হোক, ইহুদীদের ধর্মীয় নেতাদের ভয়ে তাঁর সম্বন্ধে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলল না।
উৎসবের মাঝামাঝি সময়ে যীশু মন্দিরে গিয়ে উপদেশ দিতে আরম্ভ করলেন। ইহুদী ধর্মীয় নেতারা আশ্চর্য হয়ে গেল। বলল, যে কোনদিন কোন শিক্ষাদীক্ষা লাভ করে নি, তার এত জ্ঞান কি করে হল?
যীশু তাদের বললেন, যে উপদেশ আমি তোমাদের দিচ্ছি তা আমার নিজস্ব কথা নয়, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এ তাঁরই শিক্ষা। যে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চায় সে-ই বুঝবে যে আমার এই শিক্ষা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে না, এ শুধুমাত্র আমারই কথা। যে কেবল নিজেরই মতবাদ শিক্ষা দেয়, আত্মগৌরবই থাকে তার উদ্দেশ্য। কিন্তু প্রেরণকর্তার গৌরবই যার উদ্দেশ্য যে হয় সত্যনিষ্ঠ, তার মধ্যে কোন মিথ্যাচার থাকে না। মোশি কি তোমাদের অনুশাসন দান করেন নি? তবু তোমরা সেই অনুশাসন মেনে চল না। কেন তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাইছ?
জনতা উত্তর দিল, মন্দ আত্মা তোমার উপর ভর করেছে। কে তোমায় হত্যা করতে চায়?
যীশু বললেন, একটি কাজ আমি করেছি তাতেই তোমরা সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছ। কিন্তু ভেবে দেখ, মোশি তোমাদের সুন্নত সংস্কারের অনুশাসন দিয়েছিলেন, (যদিও সুন্নত প্রথা মোশির সময় থেকে নয়, তোমাদের পিতৃপুরুষদের সময় থেকেই প্রচলিত ছিল।) এবং তোমরা সাব্বাথ দিনে এই সুন্নতের অনুষ্ঠান করে থাক। মোশির অনুশাসন মান্য করার জন্য সাব্বাথ দিনে একটি বালকের সুন্নত করায় যদি বিধান ভঙ্গ না হয় তাহলে সাব্বাথ দিনে আমি একটি মানুষকে সুস্থ করেছি বলে কেন তোমরা আমার উপর এক ক্রুদ্ধ হয়েছ? বাইরের দিকটা দেখেই বিচার করো না, বিচারে ন্যায়নিষ্ঠ হও।

জেরুশালেমের কিছু লোক বলতে লাগল, এঁকেই না ওরা হত্যা করতে চেয়েছিল। এই তো উনি প্রকাশ্যেই কথা বলছেন অথচ তারা ওঁকে কিছুই বলছে না। তাহলে আমাদের সমাজপতিরা কি সত্যিই ওঁকে মশীহ বলে মেনে নিয়েছেন? অবশ্য আমরা জানি ইনি কোতা থেকে এসেছেন কিন্তু মশীহের আবির্ভাবের সময় কেউ জানতে পারবে না কোথা থেকে তাঁর আবির্ভাব হয়েছে।
এ কথা শুনে যীশু মন্দিরে শিক্ষা দিতে দিতে উচ্চকন্ঠে বললেন, তোমরা আমাকে চেন এবং কোথা থেকে এসেছি তাও জান, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নিজের ইচ্ছায় আমি আসি নি। যিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন, তিনি সত্যময়। তাঁকে তোমরা জান না। আমি তাঁকে জানি কারণ আমি তাঁর কাছ থেকেই এসেছি, তিনিই পাঠিয়েছেন আমাকে।
এ কথায় তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করবার চেষ্টা করল কিন্তু কেউ তাঁর গায়ে হাত দিতে পারল না কারণ তখনও তাঁর নির্ধারিত লগ্ন উপস্থিত হয় নি। জনতার অনেকেই তাঁকে বিশ্বাস করল। তারা বলল, মশীহ যখন আসবেন তখন তিনি কি এঁর চেয়েও বেশি ঐশীলক্ষণযুক্ত কাজ করবেন?
ফরিশীরা যীশুর সম্বন্ধে লোকদের এসব কথা শুনতে পেল। তখন পুরোহিতদের নেতৃবৃন্দ ও ফরিশীরা যীশুকে গ্রেপ্তার করার জন্য মন্দিরের প্রহরীদল পাঠালেন। যীশু বললেন, আর অল্প কিছু দিন আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। তারপর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। তোমরা তখন আমাকে খুঁজবে কিন্তু পাবে না। যেখানে আমি থাকব তোমরা সেখানে যেতে পার না।
ইহুদী নেতারা বলতে লাগল, লোকটা এমন কোথায় যাবে যে আমরা ওকে খুঁজে পাব না? তাহলে কি ও গ্রীকদের এলাকায় গিয়ে গ্রীকদের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা আমাদের স্বজাতিদের এবং গ্রীকদের উপদেশ দেবে? ‘তোমরা আমাকে খুঁজবে কিন্তু পাবে না কারণ আমি যেখানে থাকব সেখানে তোমরা যেতে পারবে না'-এ কথায় ও কি বুঝতে চায়?

উৎসবের শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটিতে যীশু সবার সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চকন্ঠে বললেন, যদি কেউ তৃষ্ণার্ত হয় সে আমার কাছে এসে পান করুক। ‘আমার উপর যার বিশ্বাস আছে’ শাস্ত্রে লেখা আছে ‘তার অন্তরে উৎসারিত হবে জীবনদায়ী জলের স্রোত।’ যীশু এ কথা পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে বলেছিলেন। তাঁকে যারা বিশ্বাস করবে, পরে এই পবিত্র আত্মা তারা লাভ করবে। যীশু মহিমান্বিত হন নি বলে তখনও কেউ পবিত্র আত্মা লাভ করে নি।

যীশুর এই কথা শুনে জনতার মধ্যে কিছু লোক বলল, নিশ্চয়ই ইনি সেই প্রত্যাশিত নবী।
অন্যেরা বলল, ইনিই সেই মশীহ। আবার কেউ বলল, মশীহের আবির্ভাব গালীল প্রদেশে কখনও হবে না। শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে ‘দাউদের বংশে’ এবং দাউদ যে গ্রামে বাস করতেন সেই বেথলেহেমে খ্রীষ্টের আবির্ভাব হবে। এই ভাবে তাঁকে নিয়ে জনতার মধ্যে মতভেদ দেখা দিল। তাদের মধ্যে কিছু লোক যীশুকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল কিন্তু কেউ তাঁর গায়ে হাত দিতে পারল না।

মন্দিরের প্রহরীদল প্রধান পুরোহিত ও ফরিশীদের কাছে ফিরে এলে তাঁরা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তাকে তোমরা নিয়ে এলে না?
তারা বলল, ইনি যেভাবে কথা বলেন, কেউ কোনদিন সেভাবে কথা বলে নি।
ফরিশীরা বললেন, তোমরাও বিভ্রান্ত হলে? আমাদের নেতৃবর্গ বা ফরিশীদের মধ্যে এমন একজনও কি আছেন যিনি তাঁকে বিশ্বাস করেছেন? কিন্তু ঐ অর্বাচীন জনতা মোশির অনুশাসন মানে না, ওরা অভিশপ্ত।
নিকদিম ছিলেন ফরিশীদেরই মধ্যে একজন, (ইনি একবার যীশুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন) তিনি তাঁদের বাধা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কোনও ব্যক্তির সম্বন্ধে আসল ঘটনা না জেনে এবং তাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ না করে দণ্ডদান কি আমাদের অনুশাসন সম্মত?
তাঁরা তাঁকে ব্যঙ্গ করে বললেন, তুমিও কি গালীল দেশের লোক? শাস্ত্রপাঠ করে দেখ, গালীল দেশে কোন দিন কোন নবীর আবির্ভাব হয় নি। [সবাই যে যার বাড়ি চলে গেল।

Luisteren যোহন 7