পবিএ বাইবেল O.V.

ঈশ্বর নোহকে এবং তাঁর সঙ্গে জাহাজে যে সব প্রাণী ছিল তাদের কাউকে ভোলেননি। তিনি পৃথিবীতে বায়ু প্রবাহিত করলেন। তার ফলে জল কমতে লাগল। মহাজলধির উৎস সমূহ এবং আকাশের বাতায়নগুলি বন্ধ হল। আকাশ থেকে বারিবর্ষণ ক্ষান্ত হল। ধরাপৃষ্ঠ থেকে জল ক্রমশঃ সরে যেতে লাগল এবং একশো পঞ্চাশ দিন পরে জলরাশি অপসৃত হল। সপ্তম চান্দ্র মাসের সতেরো দিনের দিন জাহাজটি এসে আরারট পর্বতের উপরে থামল। দশম মাস পর্যন্ত জল ক্রমশঃ হ্রাস পেতে লাগল। দশম মাসের প্রথমদিনে পর্বত সমূহের চূড়াগুলি দেখা গেল।
চল্লিশ দিন পরে নোহ তাঁর তৈরী জাহাজের জানালা খুলে একটি দাঁড়কাক ছেড়ে দিলেন। সেটি মাটির উপরে জল শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত এদিক ওদিক উড়ে বেড়াতে লাগল। পরে ডাঙ্গার উপরে জল সরেছে কিনা জানার জন্য নোহ একটি কপোত ছেড়ে দিলেন। কিন্তু সারা পৃথিবী জলমগ্ন থাকায় কপোতটি দাঁড়াবার কোন জায়গা না পেয়ে তাঁর কাছে ফিরে এল। তিনি হাত বাড়িয়ে সেটিকে ধরে নিলেন এবং জাহাজের মধ্যেই তাকে রাখলেন। সাতদিন অপেক্ষা করে নোহ আবার সেই কপোতটিকে জাহাজ থেকে ছেড়ে দিলেন। সন্ধ্যা বেলায় সেটি তাঁর কাছে ফিরে এল, দেখা গেল তার ঠোঁটে জলপাই গাছের একটি কচি পাতা রয়েছে। সেই পাতা দেখে নোহ বুঝলেন যে মাটির উপর থেকে জল সরে গেছে। তিনি আরও সাতদিন অপেক্ষা করে আবার কপোতটিকে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু এবার সেটি আর তাঁর কাছে ফিরে এল না।
নোহের ছয়শো এক বছর বয়সে প্রথম মাসের প্রথম দিনে পৃথিবীর উপরের জল শুকিয়ে গেল। তখন নোহ জাহাজের ছাদ খুলে বাইর চেয়ে দেখলেন ধরাতল শুষ্ক হয়েছে। দ্বিতীয় মাসের সাতাশ দিনের দিন পৃথিবী সম্পূর্ণ শুষ্ক হল।

ঈশ্বর নোহকে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূদের নিয়ে জাহাজ থেকে বেরিয়ে এস। আর তোমার সঙ্গে সকল জাতের পশু, পাখী এবং ভূচর সরীসৃপ প্রাণী যত আছে তাদেরও বাইরে নিয়ে এস। পৃথিবীর বুকে তারা ছড়িয়ে পড়ুক এবং বংশবৃদ্ধি করুক। তখন নোহ নিজ পুত্রদের, স্ত্রী ও পুত্রবধূদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। আর প্রত্যেক জাতের পশু, সরীসৃপ, পাখি ও যাবতীয় ভূচর প্রাণীও জাহাজ থেকে বেরিয়ে এল। পরে নোহ প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে একটি বেদী নির্মাণ করলেন এবং প্রত্যেক জাতের শুচি পশু ও পাখিদের মধ্যে থেকে কতকগুলিকে বেছে নিয়ে সেই বেদীর উপরে হোমাগ্নিতে উৎসর্গ করলেন। প্রভু পরমেশ্বর সেই হোমের সুরভি আঘ্রাণ করে মনে মনে বললেন, শিশুকাল থেকেই মানুষের চিন্তা ভাবনা যত মন্দই হোক না কেন, আমি তাদের অপরাধে ভূমিকে আর অভিশপ্ত করব না, শৈশব থেকেই তো মানুষের অন্তরের ভাবনা-কল্পনা মন্দ। যেভাবে সকল প্রাণীকে আমি সংহার করেছি সেভাবে আর কখনও করব না। পৃথিবীর অস্তিত্ব যতদিন থাকবে ততদিন বীজ বপন ও শস্যছেদনের সময়, শৈত্য ও উত্তাপ, গ্রীষ্ম ও শীত ঋতু, দিন ও রাত্রির ব্যতিক্রম হবে না।

Luisteren আদিপুস্তক 8