ইয়োব ভূমিকা
ভূমিকা
ইয়োব নামে একজন সৎ ও ধার্মিক ব্যক্তি কিভাবে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়িয়া জর্জরিত হইয়াছিলেন, ইয়োবের পুস্তকে তাহারই মর্মান্তিক কাহিনী বর্ণিত রহিয়াছে। তিনি তাঁহার পুত্র-কন্যা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সমস্তই হারাইলেন এবং ঘৃণ্য রোগে আক্রান্ত হইলেন। এই ঘটনা লেখক সুন্দর কাব্যময় ভঙ্গিতে তিনটি পর্যায়ে ইয়োবের বন্ধুদের ভাষণ ও তাহার প্রতিক্রিয়ায় ইয়োবের উত্তরের মাধ্যমে উপস্থাপন করিয়াছেন। জীবনের চরম দুর্দশার মধ্যেও তাঁহার বন্ধুদের চিন্তাধারার পরিপ্রেক্ষিতে ইয়োবের মনোভাব সুন্দরভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে। যে ঈশ্বরের কথা ইঁহাদের বিশেষ আলোচ্য বিষয় ছিল, পরিশেষে সেই ঈশ্বর স্বয়ং ইয়োবের সম্মুখে আবির্ভূত হইলেন।
ইয়োবের বন্ধুরা প্রথাগত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে বিচার করিয়া দেখাইলেন তাঁহার এই বিষম যন্ত্রণা কি কারণে সংঘটিত হইয়াছে। তাহাদের ধারণা, ঈশ্বর সর্ব সময় ধার্মিককে পুরস্কৃত করেন এবং অধার্মিককে দণ্ডদান করেন। কাজেই ইয়োবের এই নিদারুণ যন্ত্রণা নিশ্চিতভাবে তাঁহার পাপের ফল। কিন্তু ইয়োবের নিকটে ইহার ব্যাখ্যা অত্যন্ত সহজ। এই নিষ্ঠুর দণ্ডের যোগ্য তিনি নন। কারণ তিনি অত্যন্ত সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। তিনি বুঝিতে পারেন না যে, তাঁহার মত এমন একজন ব্যক্তির উপর ঈশ্বর কি করিয়া এইরূপ অমঙ্গল ঘটাইতে পারেন, তাই তিনি সুদৃঢ় প্রত্যয়ে ঈশ্বরের নিকটে স্পর্ধিত আহ্বান জানান। ইয়োব বিশ্বাস হারান নাই কিন্তু ঈশ্বরের নিকটে ন্যায়বিচার চাহিয়াছেন এবং একজন সৎ ব্যক্তির যোগ্য মর্যাদা ও সম্মান ফিরিয়া পাইতে চাহিয়াছেন।
ঈশ্বর ইয়োবের প্রশ্নের উত্তর দেন নাই কিন্তু তিনি তাঁহার বিশ্বাসে সাড়া দিয়াছেন এবং তাঁহার ঐশী শক্তি ও প্রজ্ঞার পরিচয় দানে ইয়োবকে আপ্লুত করিয়াছেন। তখন ইয়োব ঈশ্বরকে পরম জ্ঞানী ও মহান রূপে স্বীকৃতি দিয়া নিজেকে অবনত করিলেন এবং ক্রুদ্ধ হইয়া ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যে ঔদ্ধত্য দেখাইয়াছেন তাহার জন্য অনুতপ্ত হইলেন।
আখ্যান ভাগের শেষাংশে গদ্যে লিখিত বিবরণে বলা হইয়াছে, ইয়োব কিভাবে পূর্বাপেক্ষাও অধিক সমৃদ্ধশালী হইলেন। ইয়োবের দুঃখ-দুর্দশার অর্থ বুঝিতে না পারিবার জন্য ঈশ্বর ইয়োবের বন্ধুদের অত্যন্ত ভর্ৎসনা করিলেন। একমাত্র ইয়োবই ঈশ্বরের স্বরূপ বুঝিতে পারিয়াছিলেন। তিনি বুঝিয়াছিলেন, প্রথাগত ধর্ম যেভাবে ঈশ্বরের স্বরূপকে চিত্রিত করিয়াছে, তাহার চাইতেও ঈশ্বর মহত্তর, তিনি সুমহান।
বিষয়বস্তুর রূপরেখা:
ভূমিকা - ১:১—২:১৩
ইয়োব ও তাঁহার বন্ধুরা - ৩:১—৩১:৪০
(ক) ইয়োবের অভিযোগ - ৩:১-২৬
(খ) প্রথম বক্তৃতা - ৪:১—১৪:২২
(গ) দ্বিতীয় বক্তৃতা - ১৫:১—২১:৩৪
(ঘ) তৃতীয় বক্তৃতা - ২২:১—২৭:২৩
(ঙ) প্রজ্ঞার প্রশংসায় - ২৮:১-২৮
(চ) ইয়োবের শেষ কথা - ২৯:১—৩১:৪০
ইলীহূর বক্তৃতা - ৩২:১—৩৭:২৪
ইয়োবের নিকটে সদাপ্রভুর উত্তর - ৩৮:১—৪২:৬
উপসংহার - ৪২:৭-১৭
Currently Selected:
ইয়োব ভূমিকা: বিবিএস
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Copyright © 2023 Bangladesh Bible Society. All rights reserved.