প্রেরিত্ ৪
৪
1 তাঁহারা লোকদের নিকটে কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে যাজকেরা ও ধর্মধামের সেনাপতি এবং সদ্দূকীরা হঠাৎ তাঁহাদের নিকটে আসিয়া উপস্থিত হইল, 2 তাহারা অতিশয় বিরক্ত হইয়াছিল, কারণ তাঁহারা লোকদিগকে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুতেই মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থান প্রচার করিতেন। 3 আর তাহারা তাঁহাদিগকে ধরিয়া পর দিবস পর্যন্ত বদ্ধ করিয়া রাখিল, কেননা তখন সন্ধ্যা হইয়াছিল। 4 তথাপি যে সকল লোক বাক্য শুনিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করিল; তাহাতে পুরুষদের সংখ্যা কমবেশ পাঁচ হাজার হইল।
5 পরদিবসে লোকদের অধ্যক্ষেরা, প্রাচীনবর্গ ও অধ্যাপকগণ যিরূশালেমে একত্র হইলেন, 6 এবং হানন মহাযাজক, কায়াফা, যোহন, আলেক্সান্দর, আর মহাযাজকের আত্মীয় স্বজন সকলে উপস্থিত ছিলেন। 7 তাঁহারা উহাদিগকে মধ্যস্থানে দাঁড় করাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কি ক্ষমতায় অথবা কি নামে তোমরা এই কর্ম করিয়াছ? 8 তখন পিতর পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, 9 হে লোকদের অধ্যক্ষগণ ও প্রাচীনবর্গ, একজন দুর্বল মনুষ্যের উপকার সাধন বিষয়ে যদি অদ্য আমাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কি প্রকারে এ সুস্থ হইয়াছে, 10 তবে আপনারা সকলে ও সমস্ত ইস্রায়েল লোক ইহা জ্ঞাত হউন, নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের নামে, যাঁহাকে আপনারা ক্রুশে দিয়াছিলেন, যাঁহাকে ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইলেন, তাঁহারই গুণে এই ব্যক্তি আপনাদের সম্মুখে সুস্থ শরীরে দাঁড়াইয়া আছে। 11 তিনিই সেই প্রস্তর, যাহা গাঁথকেরা যে আপনারা, আপনাদের দ্বারা অবজ্ঞাত হইয়াছিল, যাহা কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল। #গীত ১১৮:২২ 12 আর অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নিচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।
13 তখন পিতরের ও যোহনের সাহস দেখিয়া, এবং ইহারা যে অশিক্ষিত সামান্য লোক, ইহা বুঝিয়া, তাঁহারা আশ্চর্য জ্ঞান করিলেন, এবং চিনিতে পারিলেন যে, ইঁহারা যীশুর সঙ্গে ছিলেন। 14 আর ঐ আরোগ্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি উঁহাদের সঙ্গে দাঁড়াইয়া আছে দেখিয়া কিছুই বিরুদ্ধে বলিতে পারিলেন না। 15 পরে উহাঁদিগকে সভা হইতে বাহিরে যাইতে আজ্ঞা দিয়া তাঁহারা পরস্পর এই পরামর্শ করিতে লাগিলেন, 16 এই লোকদের প্রতি কি করি? কেননা উহাদের কর্তৃক যে একটা প্রসিদ্ধ চিহ্ন-কার্য সমপন্ন হইয়াছে, তাহা যিরূশালেম-নিবাসী সকলের নিকটে প্রকাশ আছে, এবং আমরা তাহা অস্বীকার করিতে পারি না। 17 কিন্তু কথাটা যেন লোকদের মধ্যে আরও রটিয়া না যায়, এই নিমিত্ত ইহাদিগকে ভয় দেখান যাউক, যেন কোন লোককেই আর এই নামে কিছু না বলে। 18 পরে তাঁহারা উহাঁদিগকে ডাকিয়া এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা যীশুর নামে একেবারেই কোন কথা বলিও না, কোন উপদেশও দিও না। 19 কিন্তু পিতর ও যোহন উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বরের কথা অপেক্ষা আপনাদের কথা শুনা ঈশ্বরের সাক্ষাতে বিহিত কি না, আপনারা বিচার করুন; 20 কারণ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না। 21 পরে তাঁহারা উহাঁদিগকে আরও ভয় দেখাইয়া ছাড়িয়া দিলেন; লোকভয়ে উহাঁদিগকে দণ্ড দিবার পথ পাইলেন না, কারণ যাহা করা হইয়াছিল, সেই জন্য সকল লোক ঈশ্বরের গৌরব করিতেছিল। 22 কেননা সেই আরোগ্য-দানরূপ চিহ্ন-কার্য যে ব্যক্তিতে সাধিত হইয়াছিল, তাহার বয়ঃক্রম চল্লিশ বৎসরের অধিক হইয়াছিল।
23 তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া দেওয়া হইলে পর তাঁহারা আপন সঙ্গীদের নিকটে গেলেন, এবং প্রধান যাজকগণ ও প্রাচীনবর্গ তাঁহাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, সেই সকলই জানাইলেন। 24 তাহা শুনিয়া সকলে এক চিত্তে ঈশ্বরের উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, হে স্বামিন্, তুমি আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এই সকলের মধ্যে যাহা কিছু আছে, সমস্তের নির্মাণকর্তা; 25 তুমি তোমার দাস আমাদের পিতা দায়ূদের মুখ দিয়া, পবিত্র আত্মা দ্বারা, এই কথা বলিয়াছিলে, যথা,
“জাতিগণ কেন কলহ করিল?
লোকবৃন্দ কেন অনর্থক বিষয় ধ্যান করিল?
26 পৃথিবীর রাজগণ দণ্ডায়মান হইল,
শাসনকর্তৃগণ একত্র হইল
প্রভুর বিরুদ্ধে এবং তাঁহার অভিষিক্তের বিরুদ্ধে।”
27 কেননা সত্যই তোমার পবিত্র দাস যীশু, যাঁহাকে তুমি অভিষিক্ত করিয়াছ, তাঁহার বিরুদ্ধে হেরোদ ও পন্তীয় পীলাত জাতিগণের ও ইস্রায়েল-লোকদের সঙ্গে এই নগরে একত্র হইয়াছিল, 28 যেন তোমার হস্ত ও তোমার মন্ত্রণা দ্বারা পূর্বাবধি যে সকল বিষয় নিরূপিত হইয়াছিল, তাহা সমপন্ন করে। 29 আর এখন, হে প্রভু, উহাদের ভয় প্রদর্শনের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; এবং তোমার এই দাসদিগকে সম্পূর্ণ সাহসের সহিত তোমার বাক্য বলিবার ক্ষমতা দেও, 30 আরোগ্য-দানার্থে তোমার হস্ত বিস্তার কর; আর তোমার পবিত্র দাস যীশুর নামে যেন চিহ্ন-কার্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধিত হয়। 31 তাঁহারা প্রার্থনা করিলে, যে স্থানে তাঁহারা সমবেত হইয়াছিলেন, সেই স্থান কাঁপিয়া উঠিল; এবং তাঁহারা সকলেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন ও সাহসপূর্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতে থাকিলেন।
শিষ্যদের প্রেম এবং প্রেরিতদের ক্ষমতা ও সাহস
32 আর যে বহুসংখ্যক লোক বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহারা একচিত্ত ও একপ্রাণ ছিল। তাহাদের একজনও আপন সমপত্তির মধ্যে কিছুই নিজের বলিত না; কিন্তু তাহাদের সকল বিষয় সাধারণে থাকিত। 33 আর প্রেরিতেরা মহাপরাক্রমে প্রভু যীশুর পুনরুত্থান বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন, এবং তাহাদের সকলের উপরে মহা অনুগ্রহ ছিল। 34 এমন কি, তাহাদের মধ্যে কেহই দীনহীন ছিল না; কারণ যাহারা ভূমির অথবা বাটীর অধিকারী ছিল, তাহারা তাহা বিক্রয় করিয়া, বিক্রীত সমপত্তির মূল্য আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিত; 35 পরে যাহার যেমন প্রয়োজন, তাহাকে তেমনি দেওয়া হইত।
36 আর যোষেফ, যাঁহাকে প্রেরিতেরা বার্ণবা নাম দিয়াছিলেন- অনুবাদ করিলে, এই নামের অর্থ প্রবোধের সন্তান- যিনি লেবীয় এবং জাতিতে কুপ্রীয়, 37 তাঁহার একখণ্ড ভূমি থাকাতে তিনি তাহা বিক্রয় করিয়া তাহার মূল্য আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিলেন।
Currently Selected:
প্রেরিত্ ৪: বিবিএস
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Copyright © 2023 Bangladesh Bible Society. All rights reserved.